রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো অবৈধ সুবিধা দিলে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

নির্বাচনে যদি পুলিশ কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি করেছি। কারো কোনো ধরনের নেগলিজেন্স থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আগে জিডি করা হতো শুধু, কিন্তু এবার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, পুলিশের প্রতি আমার নির্দেশনা হচ্ছে, নির্বাচন হতে হবে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল এবং উৎসবমুখর। পুলিশের কেউ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে এখন সেই পাওয়ার আছে। নির্বাচন এলে বন্ধ হবে কিনা সে প্রশ্ন তখন করা যেতে পারে।

সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ বেশকিছু পুলিশ কর্মকর্তা অন্য দেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আপনারাও তাদের বিষয়ে সবসময় লিখবেন। আপনারা ওই দেশে (প্রতিবেশী একটি দেশের প্রতি ইঙ্গিত করে) গিয়েছিলেন, সেখানে আপনারা প্রশ্ন করতে পারতেন-তোমরা এই ক্রিমিনালগুলোকে কবে ফেরত দিবা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ‘দে আর অল ক্রিমিনাল’। তাদের পেলেই নিয়ে আসবো। আমরা চেষ্টা করছি তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য।

বিগত সরকারের সময় নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কয়েকজন ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না? জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বেশিরভাগকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে, সবাইকে পরিবর্তন করতে পারবো না। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্রথমত বিগত তিন নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বাদ দেবো। তারপর দেখবো দুটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ছিল কারা। এরপর দেখবো একটি নির্বাচনে কারা ছিল, যদি আমার কাছে বিকল্প থাকে তবে তাকেও বাদ দিয়ে দেবো। তবে নতুন রিক্রুট করে নতুন ওসি নিয়ে আসতে পারবো না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল—একটি সংগঠন তাদের প্রকাশিত তথ্যে জানিয়েছে, গত ১৪ মাসে ৪০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর হাত রয়েছে কি না?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী বা যেকোনো বাহিনী বা যার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড হোক না কেন, প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে। কোর কমিটির বৈঠকে নমিনেশন না পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা না, কয়েকটি জায়গায় ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে পুলিশ কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, তবে আল্লাহ দিলে পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।