বঙ্গোপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক চেয়ে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে চার দিন পার হলেও এখনো দিল্লীর কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি ঢাকা। এদিকে চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তৌহিদ হোসেনের কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জিডিআইয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হবে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, এটা এখনো নিশ্চিত নয়। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এর অংশ হব কিনা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। দিল্লীর কাছ থেকে কোনো উত্তর এসেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, কোনো উত্তর আসেনি। আমরা তো মাত্র জানালাম। আশা প্রকাশ করছেন কি না- এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে আর কিছু নাই। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক চান ড. ইউনূস। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বৈঠক হওয়া নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নয়াদিল্লীতে সংসদীয় প্যানেলের একটি বৈঠকে যে তথ্য দিয়েছেন, সেটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। জয়শঙ্কর বলেছেন, ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক আয়োজনে বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আগস্টে ঢাকা সফর করেছিলেন চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই (তিনি বর্তমানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। সেই সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের (জিএসআই)- মতো উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই থেকে চীন বাংলাদেশকে জিডিআইয়ে যুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বেইজিং সফরে কোনো চুক্তি হবে না। তবে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, কোনো চুক্তি সই হবে না, এটা আমি নিশ্চিত। কিছু এমওইউ হতে পারে। স্থানীয় কূটনীতিকরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধান উপদেষ্টা ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চীন সফর করবেন। তিনি ২৬ মার্চ দুপুরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।

চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেবেন তিনি। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। ২৮ মার্চ বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। একই দিনে হুয়াই কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন তিনি। ২৯ মার্চ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে এবং সেখানে তিনি বক্তব্য রাখবেন। পরে বেইজিং থেকে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।