- ২৫ আনসার ও ফায়ার ফাইটারসহ আহত ৪০
- রাত ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ফ্লাইট চালু
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মীরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় ফায়ার ফাইটার ও আনসার সদস্যসহ আহত হয়েছেন ৪০ জন। এ ঘটনায় ফ্লাইট চলাচল সাময়িক স্থগিত করা হলেও রাত ৯টায় চালু করা হয়। আগুনে কার্গো ভিলেজে রাখা গুদামে বিদেশ থেকে আনা কোটি কোটি টাকার পন্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী সেখানে নিজের মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখে দূর থেকে আহাজারি করেন। আগুনের কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় শাহজালাল বিমানবন্দরের আকাশ।
এদিকে রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। এতে আরও বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে সমগ্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শীঘ্রই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। অগ্নিকা-ের উৎস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রী ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা ও ধৈর্য ধারণের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। অন্যদিকে, বিমানবন্দরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য বিমান কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, আগুন মূলত কার্গো ভিলেজ এলাকায়, যাত্রী টার্মিনালে এর প্রভাব পড়েনি। তবে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আর নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে অবতরণের নির্দেশ দেয়া হয়। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ করতে বলা হয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে আকস্মিকভাবে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ ঘটনায় বিমাবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রী ও দর্শনার্থীরা অনেকেই বিমানবন্দর এলাকা থেকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যায়। বিমানবন্দর সূত্রে বেলা ২টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (আমদানি করা পণ্য মজুত স্থান) কুরিয়ার গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন পৌঁছে যায় ইলেকট্রনিক্স গোডাউনে। এর মিনিট বিশেক পর কেমিক্যাল গোডাউনে দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এলে অগ্নিকা- প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে। এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে যায় গোটা কার্গো ভিলেজে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এর মধ্যে ২০টি ইউনিট আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে, পরে আরও ১৭টি ইউনিট পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা মনে করছেন। এঘটনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বিকাল ৫টার পর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যান। পরিদর্শন শেষে আগুনের ঘটনায় বিপর্যস্ত ফ্লাইট চলাচল রাতের মধ্যে চালুর আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের রপ্তানিকারক কার্গো ভিলেজ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে।
আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে উড়োজাহাজ পার্কিং করার ১০ থেকে ১৪ নম্বর বে। আগুন লাগার পর এখানে রাখা কয়েকটি উড়োজাহ সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিমানের কর্মীরা। তারা বলছেন, বেলা ২ টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। এর পরপরই কর্মীরা সব বের হয়ে আসেন। বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটাই ভয়াবহ যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। কারগো ভিলেজ এ মাথা থেকেও মাথা লম্বায় আনুমানিক ৩০০ মিটার। বিমানবন্দরটির উত্তর-পূর্ব কোনায় এটি অবস্থিত।
কুরিয়ার গুদাম থেকে আগুন : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যে অংশে কুরিয়ারের কাজকর্ম চলে, সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার কথা বলছেন কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা। অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু জানান, শনিবার সরকারি ছুটির দিনে দুপুর ২টা পর্যন্ত কার্গো ভিলেজের নিয়মিত কাজকর্ম চলে। সেখানে তখনো অনেক শ্রমিক ও আনসারসহ লোকজন ছিলেন। কিন্তু আগুন লাগার পর আনসারসহ অন্যরা সবাইকে সরিয়ে দেন। তখন বলা হয়, এই গুদামে গোলাবারুদসহ রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে; বিস্ফোরণ ঘটতে পারে; সবাই সরে যান। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কার্গো ভিলেজের নিয়মিত কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও কুরিয়ার শাখায় আধাবেলা কাজকর্ম চলে। এ কারণে এক শিফটের কর্মীরা আগেই বের হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তী শিফটে যাদের আসার কথা ছিল, তাদের অনেকে তখনও ঢোকেননি। আবার সারা দিনের শিফটে যাদের কাজ করার কথা ছিল, তাদের তখন দুপুরের খাবারের বিরতি চলছিল। এ কারণে আগুন লাগার সময় সেখানে এয়ারলাইন্স ও এজেন্টদের কর্মী কম ছিল। মিঠু বলেন, কুরিয়ার গুদামের একপাশে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। দেশের পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য আনা অনেক রাসায়নিক আকাশপথে আমদানি করা হয়। তিনি দাবি করেন, আগুন নেভাতে এসে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ৮ নম্বর ফটকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। অনুমতিজনিত জটিলতায় তারা ঢুকতে পারছিলেন না। কার্গো ভিলেজ লম্বায় আনুমানিক ৩০০ মিটার। বিমানবন্দরের উত্তর-পূর্ব কোনায় এর অবস্থান। বিমানের কার্গো শাখার তিনজন কর্মী দাঁড়িয়েছিলেন। তারা বলছেন, কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তারা দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। আমদানির কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে উড়োজাহাজ পার্কিং করার ১০ থেকে ১৪ নম্বর বে। আগুন লাগার পর এখানে রাখা কয়েকটি উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিমানের কর্মীরা। কুরিয়ার সেকশনে থাকা বিমানের কর্মীরা বলছেন, কুরিয়ার সেকশনের সেডের বাইরেও অনেক মালামাল উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে রাখা হয়েছিল; সেগুলোও পুড়ে গেছে।
আহাজারি : কার্গো ভিলেজে অগ্নিকা-ে সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী লিমন হোসেনের ৭ কোটি টাকার মালমাল পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন। লিমন হোসেন বলেন, গত বুধবার চীন থেকে জুতা, ব্যাগ, গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা হয়। আগামীকাল (রেবার) ব্যাংকের কাজ শেষ করে মালামাল বের করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে আজ আগুনে সব পুড়ে গেছে। এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে আমাদের সোর্স নিশ্চিত করেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেলো। তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ডিলারেরা মালামাল পাইকারি কিনতেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। এ ক্ষতি কমাতে সরকারের সহযোগিতা চাই।
আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ২৫ : আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার ফাইটার, আনসার ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মীসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জনই আনসার সদস্য। তাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিকেলে আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন পর্যন্ত এক হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম শুরু করে। এ অবস্থায় বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট অপারেশন বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিরাপদ এবং সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মাদ কাউছার মাহমুদ। তবে, আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো সেকশনে আগুনে উদ্ধার সহায়তায় যোগ দিয়েছে ২ প্লাটুন বিজিবি। অন্যদিকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিমান কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, আগুন মূলত কার্গো ভিলেজ এলাকায়, যাত্রী টার্মিনালে এর প্রভাব পড়েনি। তবে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৮টি ফ্লাইট : শনিবার সন্ধ্যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক বার্তায় জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের কারণে এয়ারফিল্ড সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ফলে এ পর্যন্ত আটটি ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। বার্তায় বলা হয়, ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারফিল্ড আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ঢাকা থেকে আরও চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ফিরে যাচ্ছে। তার মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুটি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট রয়েছে। অর্থাৎ সর্বমোট আটটি ডমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এখন পর্যন্ত ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরগামী বাটিক এয়ারের ওডি-১৬৩ ফ্লাইট এবং ঢাকা থেকে মুম্বাইগামী ইন্ডিগোর ফ্লাইট ট্যাক্সিওয়েতে অপেক্ষা করে। ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি অবতরণ করেছে চট্টগ্রামে। দিল্লি থেকে ঢাকা আসা ইন্ডিগোর ফ্লাইট অবতরণ করেছে কলকাতায়। এয়ার এরাবিয়ার শারজাহ থেকে ঢাকা আসা ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। হংকং থেকে ঢাকা আসা ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনসের বিমানটি অবতরণ না করতে পেরে আকাশে চক্কর দিচ্ছে। আগুনের পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে উড্ডয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ না করে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। একইভাবে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে গেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কার্গো ভিলেজ এলাকার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হবে।
ভোগান্তিতে যাত্রীরা : কার্গো ভিলেজে অগ্নিকা-ের কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারফিল্ড রাত ৯টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ ৮টি ফ্লাইটের পর নতুন কোনো ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ডাইভার্ট হয়ে আসেনি। এদিকে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব হওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অগ্নিক-ের ঘটনায় ফ্লাইট বিপর্যয় হলেও বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানান এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা, রাত ১০টা ২৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। আসার সময়ই শুনেছি যে বিমনাবন্দরে আগুন লেগেছে। অথচ ফ্লাইট ডিলে হবে কি হবে না বা ফ্লাইট কখন ছাড়বে সেটা নিয়ে কোনো তথ্য এখানে বোর্ডে বা ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখাচ্ছে না। দেখালে সুবিধা হতো। এটা নিয়ে বিড়ম্বনায় আছি।
তিনি আরও বলেন, আমি এসেছি কুমিল্লা থেকে। সিঙ্গাপুরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইটটি যাওয়ার কথা সেটি এখনো আসেনি। এখানে কর্তৃপক্ষের এমন কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না যিনি আমাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কেউ আমাদের কোনো তথ্য দিতে পারলে এতটা হেজিটেশনে থাকতাম না। পাঁচ ঘণ্টায়ও বিমানবন্দরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে এই যাত্রী আরও বলেন, এখানে উন্নতমানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল, যেটা নিয়ে সরকারের চিন্তা করার কথা। অথচ আমাদের মতো সাধারণ জনগণ এটা নিয়ে চিন্তা করছে। এরকম একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোনো ডিসিপ্লিন নেই। বিমানবন্দরে আসা আরও এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তার ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। তিনি জানান, তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল, ফ্লাইট ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। কিন্তু তা ক্যান্সেল হয়ে গেছে। যে কোম্পানির হয়ে কাজ করেন সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটি মঞ্জুর করা আছে তার। এর মধ্যে তিনি না যেতে পারলে তার ভিসা ক্যান্সেল হয়ে যাবে বলে হতাশা প্রকাশ করেন এই যাত্রী। সিঙ্গাপুরগামী আরেক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন বিমানবন্দরে বসে আছি ২ ঘণ্টা ধরে। কর্তৃপক্ষ তাকে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি পরিবর্তন করে সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। তবে বিলম্বের কারণে যদি কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সহযোগিতা করে তবে হয়তো চাকরিক্ষেত্রে তেমন কোনো ক্ষতি বা সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই।
৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম বলেছেন, কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনার পর সেখানকার শৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের মোট পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক সঙ্গে কাজ করছে, যেন উদ্ধারকাজ নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয়।