আজ ৩৪ জুলাই রোববার (৩ আগস্ট) । ২০২৪ সালের এই দিন শনিবার ছিল। ৩ আগস্ট শনিবার সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে উত্তালরূপ নেয় সারাদেশ। আলেম ওলামা থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষ এদিনে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। রাস্তাঘাট এদিন মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। এদিনটি জুলাই আন্দোলনের ইতিহাসের অনেকগুলো ঘটনার সাক্ষী। প্রথমত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সময়ের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। অন্যদিকে স্বৈরাচার হাসিনা বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করতে না পেরে আবারো আলোচনার প্রস্তাব দেয়। এদিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা।

এদিন আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীদের গণভবনে তার সঙ্গে বসার আহ্বান জানান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যেকোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে। আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে দেন শেখ হাসিনা। সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিক্ষোভ মিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুজন নিহত হন। শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে অংশ নেন। এদিন বিকালে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হন। এতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় শহিদ মিনার এলাকা। সে জমায়েত থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি আসে।

তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানির বয়ানে শোনা যায় ৩ তারিখে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল ছিল ছাত্র-জনতার। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে আলেম ওলামারা শামিল হবেন। তবে ব্যানার হবে ছাত্র-জনতার। সেদিন প্রথম স্লোগান আলেমরা দেয়। যোহরের নামাযের পর কারফিউ ও জরুরি অবস্থা ভেঙে সেখান থেকে প্রেসক্লাবে মিছিল যাবে বলে সিদ্ধান্ত ছিল। সেদিন বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। সেদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্পট বিশেষ করে আমাদের যাত্রাবাড়ি থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পুরো এলাকাজুরে কওমি ছাত্রদের নামানো হলো। মানে তাদের মাদরাসাকে হুজুরদের পাঠিয়ে পাঠিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হলো। তাতে তারা রাস্তায় নেমে আসে। আপনারা দেখেছেন তারা আহত এবং শহীদ হয়েছে। এরপর ৩ তারিখ। ৪ তারিখও একই কায়দায় পুরো মাঠঘাট একেবারে ভরে গেল সারা ঢাকা শহরে। এদিক থেকে সাইন বোর্ড অন্যদিকে গাবতলী, অন্যদিকে আবদুল্লাহপুর থেকে কেরানীগঞ্জ। সারা ঢাকা শহরে কওমী আলীয়া মাদরাসা শিক্ষক ছাত্র-জনতা মাঠে। তিন তারিখে আলেম ওলামাদের নেতৃত্¦ে পিকআপে করে পানি বিস্কুট বিতরণ করা হয়। সেদিন পিক আপতো আর্মিরা কোনভাবেই ঢুকতে দিচ্ছিল না। কাওরানবাজার থেকে বিস্কুট নিয়ে দেওয়া হয়। আপনারা দেখেছেন যে পিক আপের দিকে বন্দুক তাক করে রাখা হয়েছে। এরপরও আলেম ওলামাদের নেতৃত্বে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এদিন সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি বর্ধিত করা হয়। ৩ আগস্ট আন্দোলনে সমন্বয়ক রিফাত রশিদ সাংবাদিকদের পাঠানো এক বার্তায় এমনটা নিশ্চিত করেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬৫ জনের কমিটিকে ১৫৮ জনে বর্ধিত করা হয়। বার্তায় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্মমভাবে চালানো গণহত্যার বিচার, দায়ীদের পদত্যাগ এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৫৮ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক টিম গঠন করা হলো। সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কদের নিয়ে এই টিম বর্ধিত করা হবে।

নতুন কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে ৪৯ জনের নাম পাওয়া যায়। সহ-সমন্বয়ক হিসেবে সারা দেশ থেকে রাখা হয় ১০৯ জনের নাম। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বর্ধিত সমন্বয়ক কমিটিতে রাখা হয়। এর আগে সমন্বয়ক টিম ছিল ৬৫ জনের। তার মধ্যে ২৩ জন ছিলেন সমন্বয়ক এবং ৪২ জন ছিলেন সহ-সমন্বয়ক। এবারের কমিটিতে সহ-সমন্বক রিফাত রশিদকে সমন্বয়ক করা হয়।

৩ আগস্ট শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন নাহিদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না দেশে যত খুন, গুম হয়েছে তার দায়ে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রীপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে বিনাশ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই যেখানে আর কখনোই কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের ছাত্র তরুণরা সারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের হায়েনারা আমাদের বোনদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দমন পীড়নে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে ছাত্রদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। যার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেই কর্মসূচিতে সারা বাংলার ছাত্রদের সাথে অভিভাবক, শিক্ষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের নাগরিকরা আমাদের নিরাপত্তা দিতে কর্মসূচিতে যোগ দেয়। কিন্তু আমরা দেখেছি সরকার শাটডাউন কর্মসূচিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন শুরু করেছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে নামিয়ে কারফিউ জারি করা হয়। সেইরাতে আমরা কারফিউ ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ঘোষণা কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। তারপরও ছাত্রজনতার প্রতিরোধ থামেনি।

একজন শীর্ষ সমন্বয়ক দৈনিক সংগ্রামের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সেদিন আমরা যে চূড়ান্ত ঘোষণার দিকে চলে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে আমাদের আর পেছনে ফেরার সুযোগ ছিল না। এটা আমরা জেনে শুনেই চূড়ান্ত অবস্থায় গেছি। ফলে ৪ আগস্ট বা আরও পরে ব্যাপক ভয়াবহতা আসবে তা আমরা জানতাম। এবং সেটা গৃহযুদ্ধের দিকেও যেতে পারে। এটাও আমার আশঙ্কা হচ্ছিল। হয় আমরা বেঁচে থাকবো, না হয় মরে যাবো। বেঁচে থাকলে আমরা এই সরকারকে উৎখাত করবো, আর নইলে আমাদের মৃত্যু হবে। আমরা এই ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতির মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ৩ আগস্ট থেকে আমাদের মধ্যে এ আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল যে সরকারের পতন হবে। ৩ আগস্টের পর থেকেই এ আলোচনাগুলো শুরু হয়ে যায় ‘আমরা ৪ তারিখ রাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছিলাম। ঢাকার কতগুলো পয়েন্ট থেকে আন্দোলনকারীরা আসবে। গণভবন কীভাবে ঘেরাও হবে। বা এই সরকারের পতনের পর আমরা কী করবো।

৩ আগস্ট শনিবার সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে উত্তালরূপ নেয় বাংলাদেশ। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জমায়েত হন শিক্ষার্থীসহ হাজারো জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজধানীসহ দেশজুড়ে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ হয়।

এদিন চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বাড়ির সামনে পার্কিং করা দুটি গাড়ি ভাঙচুর এবং একটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লালখান বাজারে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়েও হামলা হয়। হামলার সময় অফিসে আগুন দেওয়া হয়। অপর একটি ঘটনায় গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- রংপুর পুলিশ লাইন্সের এএসআই আমির হোসেন ও তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। সিলেটে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের সংঘর্ষে অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়।

দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লার রেসকোর্সে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালায়, এতে ১০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয় এবং মোট ৩০ জন আহত হয়। আহত হচ্ছে বগুড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও শটগানের রাউন্ড নিক্ষেপ করে। নগরীর সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, রোমেনা আফাজ রোড, কালীবাড়ি মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, জেলখানা মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন এবং আরও পঞ্চাশজন শিক্ষার্থী আহত হন।

ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়।

এদিন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্কার শীর্ষ কর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরসহ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ছিল।

পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে। একটা ভালো পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য হলেও আপনিসহ অন্যদের সেই ত্যাগ শিকারের (পদত্যাগের) সুযোগ আছে কি না। আপনারা মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে... এ রকম যদি কোন সিচুয়েশন আসে, প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন...আমরা তো সব সময় দেশের জন্য কাজ করি। আমরা সেটা করবো, যদি প্রধানমন্ত্রী সেটা মনে করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের সব দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। আমার মনে হয় এখন সময় আসছে, যেহেতু তাদের আর কোনো দাবি অবশিষ্ট নেই, তাই আন্দোলন থেকে তারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে চলে যাবেন। এটা আমরা আশা করবো। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনটা যে জায়গায় গিয়েছে আমরা মনে করি এটা কোনোদিন তাদের কাম্য ছিল না। এখন রাজনৈতিক দলের কাছে যারা নাকি সব সময়.... বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সবসময় ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল, দেশে কীভাবে একটা বিপর্যয় ঘটাতে পারে, দেশকে একটা অকার্যকর দেশে পরিণত করার জন্য শুরু থেকেই তারা চেষ্টা করছিল। আজ তাদের ইসের মধ্যে পড়ে গেছে বলে আমরা মনে করি। এজন্য তাদের কাছে আহ্বান, তারা যাতে লেখাপড়ায় ফিরে যায়।এরপরও যদি তাদের কিছু বলার থাকে, প্রধানমন্ত্রীর দরজা সবসময় খোলা আছে। সেটা তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।

শিক্ষার্থীরা আগামীকাল থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি কেমন- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো মনে করি তারা এটা ভুল আন্দোলন করছেন। যেহেতু তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কাজেই তাদের এই অসহযোগ আন্দোলন তুলে নেওয়া উচিত। এদেশের মানুষ যদি আন্দোলনে যুক্ত হয় হবে। আমরা সেটাকে নস্যাৎ করতে চাই না।

শিক্ষার্থীরা কি কোন ধরনের আক্রমণের শিকার হবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাকে যদি মারে আপনি মার দিবেন না? আপনি কি বসে থাকবেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। রোববারআওয়ামী লীগকে মাঠে থাকার নির্দেশনা রয়েছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শোকের মাস চলছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস। এই মাসটিকে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করি। বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণ করার পর থেকেই এটা চলছে। নতুন করে এখানে কিছু হয়নি। এখানে মাইক বাজবে, সবাই একটু আলোচনা করবে। এটা প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মাসের জন্য, কোনো দিনের জন্য তাই স্পেশাল কোনো কিছু নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা এখন কোটা আন্দোলনে নেই, ছাত্রদের আন্দোলনে নেই। এখন রাজনৈতিক আন্দোলনে চলে গেছে। ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে যারা আন্দোলন অন্যদিকে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছে তারাই এ কাজগুলো করছে। আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনারা জানেন রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আমাদের একজন ছাত্র (আবু সাঈদ) নিহত হয়েছেন। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছি... দুইজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা ছাত্রদের দাবি ছিল, এটা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন গতকাল খুলনায় এক পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে আন্দোলনকারীরা হত্যা করেছে। তারপরও পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পুলিশ বাহিনী সবসময়ই মানুষের জান-মালের হেফাজতের জন্য কাজ করে। এ আন্দোলনের শুরু থেকেই পুলিশ চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে আসছে।’

প্রধানমন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ছাত্রদের জামিন দেওয়ার একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গত দুদিনে মোট ১৩৪ জন ছাত্র ও পরীক্ষার্থীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, যেসব ছাত্রকে ধরা হয়েছে, তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য একটা উদ্যোগ নিয়েছি। ‘তবে সুনির্দিষ্টভাবে যদি কারও বিরুদ্ধে, যেমন যাত্রাবাড়ীতে পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিল, এমন অভিযোগ রয়েছে একজনের বিরুদ্ধে, এমন হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাকিদের আমরা জামিনে ছেড়ে দিচ্ছি। পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি বলে আপনি দাবি করেছেন। তাহলে কাদের গুলিতে মানুষ মারা গেলো- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেসব গুলি পেয়েছি, এর অনেকগুলোই পুলিশের রাইফেলের গুলি নয়, এগুলো পুলিশ ব্যবহার করেনি।

আমরা তো যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের গুলি করতে দেখেছি- বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুবলীগের নেতারা তাদের বাধা দিতে গেছে। গুলি করতে যায়নি। আপনি জানেন সহিংসতা আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কতজন নেতা মারা গেছেন ?

জাতিসংঘ বলেছে ৩২ জন শিশু মারা গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী- জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘শিশুর সংজ্ঞাটা আপনি মনে হয় সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না। শিশুর একটা সংজ্ঞা আছে, ১৮ বছরকে কিশোর বলে, শিশু বলে না। ১৮ বছরে আমার মনে হয় সে যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। সে আর কিশোরও থাকে না, সে একটা যুবক আমাদের মতে। শিশু বলতে আমরা যা বুঝি তারা কেউ মারা যায়নি। এখানে হয়তো দু-একজন কিশোর মারা গেছে। আন্দোলনের সময় তাদের ঢাল হিসেবে নিয়ে আনা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে পদত্যাগ করবেন তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর ‘অরাজনৈতিক নেই’। হামলা হলে আত্মরক্ষায় তার ‘জবাব’ দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একথার মাধ্যমে মূলত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে আরও বেপরোয়া আচরণের লাইসেন্স দিয়ে দেয় স্বৈরাচার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।