সুশাসন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে এই দেশ সংকটে পতিত হবে এবং আগামী নির্বাচনও ঝুলে যেতে পারে। জুলাই আন্দোলনের পর সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে আদর্শগত অবস্থান ছিল। বর্তমানের দেশ এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, হয় এই আমরা ঘুরে দাঁড়াবে নয়তো বিলীন হয়ে যেতে হবে। কারণ আমাদের পরিচয়গত সংকট তৈরি হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পলিসি প্লেনাম এ জাতীয় সংলাপের আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, ব্রি জে এটি এম জিয়াউল হাসান, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশ, অর্থনীতিবিদ ড, মিজানুর রহমান, এডভোকেট মজিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন, কর্নেল (অব:) মো: জাকারিয়া হোসেন, পিএসসি,জি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে এই দেশ সংকটে পতিত হবে এবং আগামী নির্বাচনও ঝুলে যেতে পারে । জুলাই আন্দোলনের পর সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে আদর্শগত অবস্থান ছিল। বর্তমানের দেশ এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, হয় এই আমরা ঘুরে দাঁড়াবে নয়তো বিলীন হয়ে যেতে হবে। কারণ আমাদের পরিচয়গত সংকট তৈরি হয়েছে। আমাদের এই সমাজকে শেখ মুজিবুর রহমান বিভক্ত করেছে। সে দেশে এসেই স্বাধীনতা যুদ্ধকে আওয়ামী লীগের বলে ভাগ করে দিয়েছিল। সে তখন দেশ ত্যাগ না করলে স্বাধীনতার ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।

প্রফেসর দিলারা বলেন, ভারত তাদের সেভেন সিস্টারের জন্য আমাদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ স¤পর্ক রাখতে পারতো। যেটার স্বপ্ন দেখেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান সার্কের মাধ্যমে। কিন্তু তারা তা না করে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলো। যা এদেশের মানুষ কিছুতেই মানতে চায়নি। তাছাড়া ২০২৪ সালের আন্দোলনের একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এদেশের মানুষ ভারতের কোনো ধরনের আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদি কার্যক্রমও মেনে নিতে নারাজ। এই আন্দোলন হয়েছে জনগণের কল্যাণ ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, এই বিল্পবের মূল লক্ষ ছিল নতুন করে রাষ্ট্রকে গঠন করা। তবে সেদিন ক্যান্টনমেন্টে বসে একটি সরকার গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও ছিল। তখন বিল্পবী সরকার গঠন করতে পরেনি এটা একটা ভুল ছিল। তখনই সরকার ব্যবস্থার সংকট তৈরি হয়ে গেছে। তখন অন্তবর্তিকালীন সরকারের উচিত ছিল ১৯৭২ সালের সংবিধান ভেঙে দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সেদিন ক্যান্টনমেন্টে বসে চক্রান্ত হওয়ার কারণ এখন আমরা সমস্যায় পড়ে গেছি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার সংগঠক জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশ বলেন, এই সরকারের পরিচয়গত সংকট রয়েছে। তারা বলতে পারছে না এটি কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থা। যদিও বিল্পবী সরকার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। এই সরকার ঘোষণাপত্রের কিছুই করতে পারেনি। অন্যদিকে জুলাই সনদের জন্য ঐক্যমত হয়নি। জুলাই সনদ হলেও তার আইনিভিত্তি না থাকলে কোনো কাজে আসবে না। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কিন্তু তারা এখনই আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করছে। এতে করে তারা এসলেও এক বছরের বেশি থাকতে পারবে বলে সন্দেহ হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জুলাই সনদের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তা ঠিক না। ভবিষ্যতে কেউ আওয়ামী লীগের মতো কার্যক্রম করলে আবারও বিল্পব হতে পারে। তবে জুলাই সনদ নিয়ে এত কিছু হলে নির্বাচন কেমন হবে বুঝাই যাচ্ছে। ব্রি জে (অব) এটি এম জিয়াউল হাসান বলেন, আমরা সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছি। জুলাই অভ্যুত্থানে যে ৩ কোটি ছাত্র মাঠে নেমেছিল তাদের জীবন নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলছি। এই ছাত্রদের জন্য আমরা কি করলাম। কমিশন কি করেছে। সরকার কি করেছে। । আমরা সশস্র বাহিনীতে সংস্কার করতে পারলাম না। । সরকার ১৪ মাসে কিছুই করতে পারলো না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দরকার ছিল রাজনৈতিক সংস্কার। কিন্তু তা হয়নি। এখন একটি দল দ্রুত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া। তারা দ্রুত নির্বাচন চায়। বর্তমান দুর্বল সরকারকে তার নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা হাসিনাকে তাড়াতে সক্রিয় ছিল তাদের উচিত ছিল রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না এমনটা বলা কিন্তু তা হয় নি । যার ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।

এ সাংবাদিক নেতা আরো বলেন, পেশি শক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

সংলাপে কর্নেল (অব:) মো: জাকারিয়া হোসেন বলেন, ২০২৪-এর পরিবর্তন শুধু একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়; এটি একটি নতুন, উজ্জ্বলতর অধ্যায়ের সূচনা। আমরা আজ একটি ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছি। একটি পথ আমাদের নিয়ে যেতে পারে পুরনো ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তির দিকে, আর অন্যটি আমাদের নিয়ে যেতে পারে একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের দিকে। এই পথ চলায় আমাদের দায়িত্ব হবে সুশাসন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন-এর প্রতি আমাদের সকলের অটল অঙ্গীকার। এটি কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সকলের-রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং প্রতিটি নাগরিকের-দায়িত্ব।