মাঠ পর্যায়ে পুলিশের সাথে নানা কারণেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে জনগণের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ হয়ে ওঠে পেটোয়াবাহিনী। সেবার মান ছিল তলানীতে। দেশজুড়ে ভীতির সংস্কৃতি চালু করে জনগণের সাথে যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি করে পুলিশ। এই দূরত্বের কারণেই ক্ষুব্ধ জনগণ জুলাই আগস্ট গণবিপ্লবে পুলিশের ওপর মারমুখী হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘঠে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশকে জনতার পুলিশে পরিণত করতে মাঠ থেকে শীর্ষ পর্যায়ে দফায় দফায় পরিবর্তন আনা হয়। পাশাপাশি নানা কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়। এবার জনগণের সাথে সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচাতে জেলায় জেলায় নাগরিকদের নিয়ে বসছে পুলিশ। এজন্য জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের নাগরিক সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান আইজিপি বাহারুল আলম। পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহ পরবর্তী ‘ডি ব্রিফিং’ সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন। সভায় পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আত্মসমালোচনা করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই সভাতেই প্রথমবারের মতো পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের দিক গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর পুলিশ সদর দফতরের একাধিক সুত্রে পাওয়া।
সূত্র জানায়, সভায় সদ্য সমাপ্ত পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ এর তৃতীয় দিনে গত ১ মে রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ নাগরিক সভা করার দিকটি আলোচনায় উঠে আসে। প্রথমবার অনুষ্ঠিত এই সভায় সাবেক আইজিপি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা হাজির থেকে তাদের চাওয়া পাওয়ার কথা বলেন। সেখানে পুলিশ সংস্কারের নানা দিকও উঠে আসে। জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়টিও উঠে আসে অম্ল মধুর আলোচনায়। একাধিক বক্তার বক্তব্যে পুলিশের বল প্রয়োগের দিকটাও আলোচনায় স্থান পায়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে অনুষ্ঠানে কথা বলতে না পারায় নাগরিক প্রতিনিধিদের কেউ কেউ এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া কোন কোন বিশিষ্টজন পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্বের গোড়ায় যেতে পরামর্শ দেন।
সূত্র মতে, ‘ড্রি ব্রিফিং’ সভায় নাগরিক সভার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সেখানে সময় স্বল্পতার কারণে নাগরিক প্রতিনিধিদের কেউ কেউ কথা বলতে না পারায় যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ বিষয়টিও পুলিশের আত্মসমালোচনায় তুলে ধরা হয়। জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় জনগণের সঙ্গে পুলিশের বড় ধরনের দূরত্ব এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়। এই দূরত্ব ঘোচাতে জেলায় জেলায় নাগরিক সভা আয়োজনের দিক নির্দেশনা দেন পুলিশ প্রধান। এই আয়োজন পুলিশের স্থাপনায় না করে অন্য কোন ভেন্যুতে করার দিকটিও উঠে আসে পুলিশ কর্মকর্তাদের আলোচনায়।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমরা ‘জনতার পুলিশ’ হতে চাই। জনগণের সঙ্গে আস্থা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক গড়তে চাই। আমরা জনগণের পাশে থাকতে চাই। এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে পুলিশের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা ঘোচাতে চাই। এজন্যই জেলায় জেলায় নাগরিক সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরবানির ঈদের পর এ ধরনের সভা শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।