কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশনের কর্মীদের চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে সংস্থাটির কর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে রোববার এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার একদিনের মাথায় গতকাল সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘জনস্বার্থ রক্ষায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করা হল।’ কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয় বলছে, এসব দপ্তর ও শুল্ক স্টেশনের চাকরি রাজস্ব আহরণের ‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণ’ এবং সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ‘গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক’। ১৯৫৮ সালে অত্যাবশ্যকীয় সেবা (দ্বিতীয়) অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকার এ ঘোষণা দিয়েছে। এ অধ্যাদেশের অধীনে কোনো কর্মী ‘কারণ ছাড়া’ কর্মস্থল ত্যাগ করলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে কারাদ-, জরিমানা বা উভয় দ- হতে পারে।

গত সপ্তাহ থেকে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সংস্থাটির কর্মীরা; শনিবার থেকে সেটি রূপ নেয় ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’। এ সময় দেশের কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের সব দপ্তরে সেবা বন্ধ থাকে; চালু ছিল কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা। এর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি অচল হলে ব্যবসায়ীদের তরফেও উদ্বেগ জানানো হয়। সংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপও চান তারা। এর মধ্যে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনে গড়ালে রোববার কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। সিদ্ধান্ত নেয় কাস্টমসের চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ ঘোষণা করার।

আন্দোলনের মধ্যে ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরু করার কথাও জানায় দুদক। এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই এনবিআরের আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন। এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার কথা ছিল অর্থ উপদেষ্টার। কিন্তু ‘শাটডাউন’ প্রত্যাহার না করায় সে আলোচনায় যাননি তিনি। এর মধ্যে সংকট নিরসনে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার। দিনভর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়। এরপর থেকে কাস্টম হাউজসহ এনবিআরের সব দপ্তরে কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকার তথ্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।