‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি’র কারণে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। আগামী রোববার তার ঢাকা আসার কথা ছিল। সম্প্রতি কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে এ সফর স্থগিত করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানায়, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী ২৭ থেকে ২৮শে এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারছেন না। সফরের পরবর্তী তারিখ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। ইসহাক দারের সফরে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এই বৈঠক ঘিরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি ছিল। গত ১৭ই এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা সফর করেন। ওই সময় মন্ত্রী পর্যায়ের সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।
সম্প্রতি কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রীর সফরটি স্থগিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের গুলীতে কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে। তারা বলছে, পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকা- চালিয়েছে। যদিও পাকিস্তান হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে এজন্য ইসলামাবাদকে দোষারোপ করারও প্রতিবাদ করেছে।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনাটির পর গত বুধবার সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড়সড় পাঁচটি পদক্ষেপ নেয় দিল্লী। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের কোনো নাগরিককে ‘সার্ক ভিসা’ না দেওয়া; পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ রাখা, পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশন থেকে কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়া; পাকিস্তানের নাগরিকদের দেওয়া ভারতের ভিসা বাতিল এবং তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ। এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি সাময়িক স্থগিত; ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল (শিখ তীর্থযাত্রীরা এর বাইরে থাকবেন); ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা; ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে আগতদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ; ভারতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা; ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ত্রিশে নামিয়ে আনা; ভারতীয় এয়ারলাইনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ও ভারতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য স্থগিত। এমন উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ভারতের অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করা এবং দেশটির নৌবাহিনীর মিসাইল বিধ্বংসের পরীক্ষার খবরও মিলছে গণমাধ্যমে।