বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়। তিনি জীবন-মৃত্যুর এক কঠিন সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এমনটিই জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডও বলেছে, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটেছে। তারা তার সুস্থতায় সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানেিয়ছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যেন কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত। গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে খালেদা জিয়া জাতির জন্য ভীষণ রকম অনুপ্রেরণা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সুস্বাস্থ্য দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময় বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গতকাল দুপুরে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাদ জুম্মা নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিলের পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, আপনারা জানেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে ডাক্তাররা বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়। সেজন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য সারাদেশের জনগণের কাছে মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়েছিলাম। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়া পল্টনের মসজিদে নামাজ আদায় করে আমরা সবাই দেশনেত্রীর রোগ মুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তালার কাছে দোয়া চেয়েছি।

মহাসচিব বলেন, আমরা দোয়া চেয়েছি আল্লাহতায়ালার কাছে, তিনি যেন ম্যাডামকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দেন, সুস্থ অবস্থায় আবার জনগণের মাঝে ফিরিয়ে এসে দেশের মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দেয়। আমরা আবারও দেশের মানুষের কাছে তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই ম্যাডামের জন্য দোয়া করবেন। তিনি বলেন, দেশনেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, কারাভোগ করেছেন। সবশেষে তিনি অসুস্থ হাসপাতালে ছিলেন।

এর আগে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনেও বিএনপি মহাসচিব দলের চেয়ারপার্সনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে আছে। বৃহস্পতিবার রাতে আমি প্রায় দুইটার সময়ে ফিরেছি হাসপাতাল থেকে। তখনও ডাক্তাররা চেষ্টা করছিলেন, কাজ করছিলেন। আমি অনুরোধ করব আপনারা আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া করবেন, দেশবাসীদের দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে।

এদিকে খালেদা জিয়া রোগমুক্তি ও সুস্থতায় রাজধানীসহ সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বাদ জুম্মা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় গুলশান চেয়ারপার্সন অফিসে ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা ফুলের তোড়া পৌঁছে দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল গ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

এদিকে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। এ ছাড়া ঢাকায় খালেদা জিয়ার পাশেই আছেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর মুনে বিকেল থেকেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার বাসভবন ও হাসপাতারেল সামনে ভীড় করতে থাকেন। অনেকেই ফোনে তার শারীরিকত অবস্তার খবর নিচ্ছেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনেককেই ভিষন্ন মনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, বেগম জিয়ার অসুস্থতার কথা শুনে তাদের মন খুবই খারাপ। দেশের বর্তমান এই সময়ে তার বেঁচে থাকা খুবই প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে এয়ারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম খালেদা জিয়া।রাতেই মেডিবেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে (চেষ্টে) ইনফেকশন হয়েছে। কেবিনে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে উনার চিকিৎসা চলছে।

উল্লেখ্য, ৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এর আগে ১৫ অক্টোবর তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। একদিন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এছাড়া গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে ১১৭ দিন অবস্থান শেষে ৬ মে দেশে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছিলেন।