ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ রোডম্যাপ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘ভোটগ্রহণের অন্তত ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে, ভোটগ্রহণের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী রমযানের আগে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী বছরের ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রমযান শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে হিসেবে ভোট রমজানের আগেই অনুষ্ঠিত হবে।

ঘোষিত রোডম্যাপে মোট ২৪ দফা রয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে, যা প্রায় দেড় মাস চলবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধারা।

ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণের সময়সূচি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম ৩ দিন আগে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে আসনভিত্তিক যাচাই-বাছাইকৃত ভোটার তালিকা, ছবিসহ বা ছবিহীন, সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের কাছে সিডি অথবা পিডিএফ লিংক আকারে পাঠানো হবে। এছাড়া নির্ধারিত সংখ্যক কপি মুদ্রণের মাধ্যমে ভোটার তালিকা বিতরণ করা হবে। নভেম্বর মাস জুড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলবে, যেখানে শুধুমাত্র নতুন তথ্য ও ডাটা সন্নিবেশ করা হবে।

নির্বাচন পরিচালনার আইনি ভিত্তি হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯-এর সংশোধনী প্রক্রিয়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুযায়ী, গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া প্রতি ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি কক্ষ এবং প্রতি ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। নির্বাচনি ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা ও পোস্টারসহ সংশ্লিষ্ট সামগ্রী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মুদ্রিত হবে। নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ২৯ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণের ৪৫ দিন আগে শেষ হবে।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে উল্লেখ করে সচিব জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজও ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে এবং ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা ব্যবহার করে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হবে। দেশি পর্যবেক্ষক নিবন্ধন ২২ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে এবং ১৫ নভেম্বর নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। একই তারিখের মধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক অনুমতি প্রদানের যাবতীয় কার্যক্রমও শেষ হবে।

নির্বাচনি তথ্য প্রচারের জন্য ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, টিএন্ডটি, বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, আইজিপি, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং বিশেষ শাখার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম সভা ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবং তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার সার্বিক প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে ফলাফল প্রেরণ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মতো কার্যক্রমের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করতে ৩১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।