প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীষর্ক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, অর্থনীতির রিসোর্স থেকে যদি কর চুরি বন্ধ করা যায়, তাহলে দেশের কোনো ঋণই থাকবে না। তারা বলেন, বাজেটে যে পরিমাণ ঋণের কথা বলা হয়েছে সেটি এনবিআর নিজেই আদায় করতে পারে। শুধুমাত্র সততা আর দেশপ্রেম থাকাটাই জরুরী। সোমবার ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ ব্যুরো (আইইআরবি) তাদের পুরানা পল্টনস্থ কার্যালয়ের হল রুমে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

আইইআরবির চেয়ারম্যান, দৈনিক সংগ্রামের প্রকাশক ও সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, আইইআরবির উপদেষ্টা সাইফুল আলম খান মিলন। প্যানেল বক্তা ছিলেন আইইআরবি’র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম আলি আক্কাস ও ইউআইইউ এর শিক্ষক প্রফেসর ড, ওসমান ফারুক প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইআরবিরি জেনারেল সেক্রেটারি ড. মো: মিজানুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের যদি অবদান রাখার ইচ্ছে থাকে তাহলে আরও মনোযোগ দিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। করণীয় কি সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। আমাদেরকে আরও শিখতে হবে। বাজেটের অন্তত চার মাস আগে যুক্তিভিত্তিক সেমিনার করা উচিত। সেটা লিখিত আকারে যথাযথ কর্তপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। তাহলে তারা চিন্তা করে দেখতে পারবে। তারা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, অনেকেই কঠিন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু এই কঠিন ঋণকে কিভাবে আরও সহজ করা যায়, এতে যাকাতের অর্থটাকে যদি একটি সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, তাহলে ঋণের বোঝাটা হয়ত কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। এই বিষয়টি নিয়ে এখন থেকে চিন্তাভাবনা শুরু করতে হবে। তড়িগড়ি না করে চিন্তাভাবনা করেই সব কিছু করতে হবে। যা কিছু করতে চাই, বলতে চাই, সেটা সময়মত করতে হবে। এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সময়মত কাজ করাটাই ঈমানের অংশ। অতীতে অনেক কাজ হয়েছে, ভবিষ্যতে এই গবেষণাকে আরও বাড়াতে হবে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা সময় বেঁধে দেয়া হতো। তখন অনেক টাকা আদায় হয়েছে। এখন সময় অনেক বেশি দেয়া হচ্ছে। এতে করে যারা কালো টাকার মালিক তারা নানা ফাঁক ফোকর বের করে ফেলে। এতে মূলত রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ আইনের অনেক কিছুই রেখে দেয়া হয়, যাতে করে অসাধুরা পার পেতে পারে। তিনি বলেন, কর প্রদানের বেলায় আইনের নানা অসঙ্গতি রয়ে গেছে। অনেক কিছুই সংষ্কার করা হয়েছে বলা হলেও এখনো নানা সমস্যা রয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহার করেই কর দেয়া থেকে অনেকেই বিরত থাকেন। তিনি বলেন, সরকার কখনোই করের সংস্কার সেভাবে করবে না। কারণ সরকার নিজেই করদাতা। কর দেয়া নেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু আমাদের দেশে এটা সরকারের কাছে রয়ে গেছে। রাষ্ট্র যদি এটি নিয়ন্ত্রিত করতো তাহলে কাশিমবাজার কুঠি থেকে কে চেয়ারম্যান থাকবে, বা তাকে কিভাবে সরাতে হবে , ওকে ধর, ওকে ধরনা, এসব হতো না। এখন তো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই। সবই যেন সরকারের মধ্যে ঢুকে গেছে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলেন, এটা ছাত্র-জনতার কারণেই হয়েছে। অথচ কেউই বলে না, এখানে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। সুক্ষèভাবে চিন্তা করলে বুঝা যাবে, এটি আল্লাহর সাহায্যেই হয়েছে। যারা দুর্বল ঈমানের তাদের এটি বুঝানো যাবে না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কি হবে এটা নিয়ে চিন্তা না করে জনমত গঠন করতে হবে। মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহর বিধানের সদ্বব্যবহার যেন হয় সেদিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, আমাদের দেশের পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার অত্যন্ত জরুরী। আমি সংস্কারের বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমীরে জামায়াতের সাথে ছিলাম। এখানে বিভিন্ন সংষ্কারে সুন্দর সুন্দর বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু দল রাজি আবার অনেক ক্ষেত্রে বড় দল বিএনপি রাজি না। তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, তাহলে একটা সময় পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, আমাদের ৪০ শতাংশ জনগণ তরুণ। তাদের কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর কোনো লক্ষণ আমি দেখছি না। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও শক্তিশালী করা উচিত। এক্ষেত্রে একটি প্রশিক্ষিত জাতি গঠনে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। যারা বিদেশে গিয়ে নিজেদের দক্ষতা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। এটি বন্ধ করা না গেলে দেশের উন্নয়ন কোনো দিনই সম্ভব হবে না। ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে না। আইনের পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষের কাছে আমাদের কথাগুলো পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের হতাশ হলে চলবে না।

আবুল আসাদ বলেন, বলা হচ্ছে সব কিছুই গতানুগতিক হচ্ছে, কিছু ফিগারের পরিবর্তন করা হচ্ছে। এমন একটি উন্নযনকাঠামো জাতির মগজে দিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে উন্নয়ন মানে নতুন গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শাসকের ভূমিকা বেশি। একটি সৎ ও যোগ্য শাসকই একটি দেশের আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে। চেষ্টা করতে হবে, আয় বাড়াতে হবে এবং সেই আয় দিয়েই ব্যয় করতে হবে। এখন বলা হচ্ছে, বরাদ্দ যেটা সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে লোন নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের আয় বাড়াতে হবে। যে ঋণের কথা বলা হচ্ছে সেটি তো এনবিআর আয় করতে পারে। অর্থনীতির রিসোর্স থেকে যে কর চুরি করা হয়, সেটি যদি বন্ধ করা যায় তাহলে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি কেন এর বেশিও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব। আমি তো মনে করি, কোনো ঋণই নেয়ার দরকার নেই। কোনো ঋণই থাকবে না। এই জন্য দরকার জনগণের সরকার। যারা জনগণের চাওয়া পাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিবে। নির্বাচিত হতেই হবে এই চিন্তা বাদ দিয়ে যদি সরকার কাজ করে তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত।

মূল প্রবন্ধে ড. মিজানুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এসব চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলায় ইসলামী অর্থনীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হলেও এতে কিছু মৌলিক চ্যালেজ্ঞ রয়েছে। যেমন উচ্চ সুদ ব্যয়, কম উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ এবং কালো টাকা সাদা করার অনৈকতা। ইসলামী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্তি বাজেট কাঠামোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য করতে পারে।

চ-১ (ও) ১৮-০৬-২০২৫.ফড়প

গল টেস্টে শেষ বিকেলে ব্যাটিং ধস বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার: শ্রীলংকার বিপক্ষে গল টেস্টে গতকাল দ্বিতীয় দিনেই ৫০০ রানের ইনিংস তুলে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি আর লিটন দাসের ৯০ রানের ইনিংসের উপর ভর করে সে পথেই হাঁটছিল টাইগাররা। কিন্তু গতকাল শেষ বিকেলটা ভালো কাটেনি টাইগারদের। শেষ বিকেলে ব্যাটিং ধসে ২৬ রানে ৫ উইকেট পতনের পর টাইগারদের ৫০০ রান অনিশ্চিতের মুখে পড়েছে। দ্বিতীয় দিন শেষে ১৫১ ওভারে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান করেছে বাংলাদেশ। শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩ ও লিটন ৯০ রান করেন। দলের পক্ষে অপরাজিত আছেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি এখনো। শ্রীলংকার বিপক্ষে গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম দিন শেষে ৯০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৯২ রান করেছিল বাংলাদেশ। শান্ত ১৩৬ ও মুশফিক ১০৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১২ রান যোগ করে দ্বিতীয় দিনের সপ্তম ওভারে থামেন শান্ত। শ্রীলংকার পেসার আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে মিড অফে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে ধরা পাড়েন তিনি। ২৭৯ বল খেলে ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪৮ রান করেন শান্ত। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সাথে ৪৮০ বলে ২৬৪ রানের জুটি গড়েন শান্ত। বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শান্তর বিদায়ে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। জুটি গড়ার চেষ্টায় শুরুতেই জীবন পান তারা। মুশফিক ১২৬ রানে রান আউট এবং লিটন ১৪ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। জীবন পেয়ে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তারা। এতে ৪ উইকেটে ৩৮৩ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তখন মুশফিক ১৪১ ও লিটন ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ৯৭ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে সপ্তম ও শ্রীলংকার বিপক্ষে তৃতীয়বার মত দেড়শ রানের কোটা স্পর্শ করেন মুশফিক। মুশফিকের দেড়শর পর বাংলাদেশের রান চারশ ও লিটনের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়। এরপর ১৩০তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারির পর বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয় খেলা। তখন ৪ উইকেটে ৪২৩ রান ছিল টাইগারদের। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর শুরু হয় খেলা। বৃষ্টির বিরতির পর খেলতে নেমে ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছেন মুশফিক ও লিটন। কিন্তু পরপর দু’ওভারে বিদায় নেন তারা। ১৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আসিথার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মুশফিক। উইকেট বাঁচাতে রিভিউ নেন মুশফিক। টিভি রিপ্লেতে ‘আম্পায়ার্স কল’-এর বিদায় ঘন্টা বাজে মুশফিকের। ৯ চারে ৩৫০ বল খেলে ১৬৩ রান করেন তিনি। এতে পঞ্চম উইকেটে লিটনের সাথে মুশফিকের ১৪৯ রানের জুটির ইতি ঘটে। পরের ওভারে নার্ভাস নাইন্টিতে আউট হন লিটন। শ্রীলংকার স্পিনার থারিন্দু রতœায়েকের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১২৩ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯০ রান করেন লিটন। দলীঢ ৪৫৯ রানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর পরের দিকের ব্যাটাররা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। ৪৮৪ রানে নবম উইকেট পতন হয় টাইগারদের। এসময় জাকের আলি ৮, নাইম হাসান ১১, তাইজুল ইসলাম ৬ রানে আউট হন। দিন শেষে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা রানের খাতা না খুলে অপরাজিত আছেন। শ্রীলংকার অভিষিক্ত স্পিনার থারিন্দু, দুই পেসার আসিথা এবং মিলান রতœায়েকে ফার্নান্দো ৩টি করে উইকেট নেন। এর আগের দিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন শান্ত ও মুশফিক। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন দুজনেই। ৩ উইকেটে ২৯২ রান সংগ্রহ করে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ১৩৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামেন শান্ত। আর ১৮৬ বলে পাঁচ চারে ১০৫ রানে দিন শুরু করেন মুশফিক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫১ ওভারে ৪৮৪/৯(আগের দিন ২৯২/৩) (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০, জাকের ৮, নাঈম ১১, তাইজুল ৬, হাসান ০*, নাহিদ ০*; আসিথা ২৮-৫-৮০-৩, মিলান ২২.৪-৬-৩৮.৩, থারিন্ডু ৪৯.২-৩-১৯৬-৩, প্রাবাথ ৪৮-২-১৫৪-০, ধানাঞ্জায়া ৩-০-৭-০)।