দুই গোডাউন পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি

ঢাকার গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম। তিনি বলেন, মার্কেটের পঞ্চমতলায় আগুনের খবর পেয়ে ১০টা ৩ মিনিটে প্রথম ইউনিট সেখানে যায়। পর্যায়ক্রমে যোগ দেওয়া ১১টি ইউনিটের চেষ্টায় এক ঘণ্টার মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার প্ল্যান ছিল না, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আবারও বিপর্যয়

গতকাল সকালে লাগা আগুন ছিল বেশ বিপজ্জনক, জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। আগুনে হতাহতের কোনো খবর না থাকলেও মারাত্মক ধোঁয়া ও অব্যবস্থাপনার কারণে উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটে।

আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। তিনি জানান, মার্কেটের নিচতলা ও চারতলায় বহু লোক আটকে ছিলেন। তাদের সরে যেতে বারবার বলা হলেও কেউ বের হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের সরানো হয়। এতে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটিতে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। আমরা দুই-তিন বছর আগেই এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম। বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো ছিল। সেখান থেকেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।’

আগুনে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি দোকানের শাটার খুলে আগুন পেয়েছি। কত দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।’

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘটনাস্থলে ১১টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালের দিকে আগুনের সূত্রপাত হলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্লোরে।

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটটি গুলিস্তান এলাকার অন্যতম ব্যস্ত মার্কেটগুলোর একটি। কয়েক বছর ধরেই ফায়ার সার্ভিস ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করলেও যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।

দুই গোডাউন পুড়ে ছাই কোটি টাকার ক্ষতি

সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত মোবাইল এক্সেসরিজের গোডাউন। গতকাল সকাল ৯টায় গোডাউন মাত্র খোলা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এর এক ঘণ্টা পরই আগুন লাগে। আগুনের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভবনের পাঁচতলায় জজ মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর দুটি গোডাউন পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। গোডাউন দুটিতে মোবাইল এক্সেসরিজের প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল বলে দাবি জজ মিয়ার। দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে আগুন লাগা ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন জজ মিয়া। আগুনে দুটি গোডাউন পুড়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। দুজন ধরে তাকে ভবনের নিচে নামিয়ে আনেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমার গোডাউনে ছিল সব আইফোনের মালামাল। এক কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল। সব শেষ।

শাহ পরান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পঞ্চম তলায় পশ্চিম পাশে একটি গোডাউন আছে আমার। এর পাশেই জজ মিয়ার দুটি গোডাউন। জজ মিয়ার গোডাউন দুটি পুড়ে গেছে। গোডাউন দুটিতে প্রায় কোটি টাকার মালামাল ছিল।

কথা হয় আব্দুল মান্নান নামের আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে মার্কেটে ছুটে আসি। চতুর্থ তলায় আমার তিনটি গোডাউন রয়েছে। তবে আমার গোডাউন পর্যন্ত আগুন পৌঁছাতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিসের প্রশংসা করে এ ব্যবসায়ী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তড়িৎ ভূমিকার কারণে আগুন অন্য গোডাউনে ছড়াতে পারেনি। নাহলে আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।

মার্কেটের পঞ্চম তলায় ভিশন এক্সেসরিজ নামের এক গোডাউনে কাজ করেন জীবন কুমার। তিনি বলেন, দোকান (গোডাউন) খুলে জিনিসপত্র পরিষ্কার করছিলাম। এমন সময় চারদিকে দেখি ধোঁয়া। ভয়ে গোডাউন বন্ধ করে নিচে নেমে আসি।