ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ মদদেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের বিভিন্নস্তরের নেতারা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে ইঙ্গিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার নিউটাউনে আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি হেনস্তা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ভারত সরকার তো আমাদের অতিথি হিসেবে কয়েকজনকে রেখেছে, আমি কি না বলেছি? অতিথি হিসেবে রাখার রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। ভারত সরকারের অন্য কোনো কারণ রয়েছে। কিন্তু আমরা তো কিছু বলিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশী হয়ে গেল, এটা কখনো হয়! আপনারা কেন বলবেন বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশী! তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির ফলে ভারতে আসা উদ্বাস্তুরা সকলে অবশ্যই ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশী কোনোভাবেই নয়।
মোদি সরকারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, একজন ভারতীয়, দেশের যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। কিন্তু, বিভিন্ন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই, বাংলাদেশী বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের নির্বাসন করার কথা বলা হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশী নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষীদের রোহিঙ্গা বলা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা তো মিয়ানমারের। ওরা বাংলাটা জানল কোথা থেকে। মমতা অভিযোগ করেন, বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হচ্ছে- বাংলা ভাষায় কথা বললেই রিপোর্ট করে দেয়া হবে। ওরা জানে না, বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা এশিয়ায় দ্বিতীয়। আর বিশ্বে পঞ্চম। মমতা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলায় বাংলাদেশী টান থাকতেই পারে। ওপার বাংলায় তারা ছিলেন এটা ভুলে গেলে চলবে না।
এর আগে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হয়রানির প্রতিবাদে বুধবার কলকাতায় এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি মধ্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে গিয়ে শেষ হয়। বৃষ্টিতে ভিজেই এতে যোগ দেন মমতা। তার সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। মিছিল শেষে সমাবেশে মমতা বলেন, ‘মোদি সরকার এবং বিজেপির এই আচরণে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত, ব্যথিত, দুঃখিত, মর্মাহত। কেন্দ্রীয় সরকার একটি নোটিফিকেশন জারি করেছে। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাকে অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে। বিজেপি কি দেশের জমিদারি পেয়ে গিয়েছে? যাকে ইচ্ছা জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের কাছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড রয়েছে। আমাদের ২২ লাখ বাংলার শ্রমিক-মজদুর আছে। তারা বাংলায় থাকলে অনেক ভালো থাকতে পারেন। সূত্র: টিভি৯।