চোখ জুড়ানো ও আশা জাগানিয়া কিছু দৃশ্য!! আগামী দিনসমূহেও দ্বীন-মিল্লাত, জাতি ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব ধরনের মতবিরোধ, বিভেদ-বিভাজনের উর্ধ্বে ওঠে সকলের ঐক্যবদ্ধ যাত্রার প্রত্যাশায়...। আল্লাহ তাআলা সকলকেই তাওফীক দান করুন, হিদায়ত করুন !! আমীন!’ গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’র কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন মন্তব্য লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আহমদ আলী।

শুধু প্রফেসর আহমদ আলী নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখো মানুষ মার্চ ফর গাজা নিয়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। আলোচনায় ফ্রি ফিলিস্তিনের দাবি থাকলেও অধিকাংশই একটি বিষয় ফোকাস করার চেষ্টা করেছেন। সেটি হচ্ছে দলমত নির্বিশেষে সবাই এক মোহনায়। ঐক্যের অনন্য নিদর্শন গড়লো বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের পর সম্পর্কে যেটুকু টান পড়েছিল, আজ সেটুকু আবার ফিরে পেল। নির্যাতিতদের পক্ষে জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে প্রিয় বাংলাদেশ এভাবেই অতীতেও রুখে দাঁড়িয়েছে, এখনও দাঁড়াচ্ছে, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে।

সবশেষ গত ৫ আগস্ট সারবিশ্ব ঢাকাবে ভিন্নরুপে দেখেছিল। দীর্ঘ ৮ মাস পর মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিকে ঘিরে পুরো বিশ্ব আবারো অন্য এক ঢাকা দেখতে পেল। গাজায় ইসরাইলী দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ গণসমাবেশে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে মুখরিত এ জনসমাগমে তিল ধারনের জায়গা ছিল না উদ্যানে। গণসমাবেশে অংশ নেন নারী-শিশু-বয়স্করাও। ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়ান দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানের পাশাপাশি ‘গাজা উই আর উইথ ইউ’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন মানুষজন। সব বয়সী মানুষের এই গণজমায়েতে সবার দৃষ্টি কাড়ে একদল শিশু। তারা কেউ মাথায় ব্যান্ডেজ, কেউ হাত-পা বেঁধে , কেউবা হাতে করে নিয়ে এসেছিল ছোট কফিনে মোড়ানো ‘শিশু লাশ’। এভাবেই ‘আহত ফিলিস্তিনি’ সাজে মিছিলে অংশ নেয় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু শিল্পীরা। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করেছেন অনেকেই।

মার্চ ফর গাজার অভাবনীয় কর্মসূচিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবাই ছিলেন সরব। সাংবাদিক মো: মনির হোসাইন লিখেছেন, এত মানুষ এর আগে একসঙ্গে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। এতগুলো মানুষ কখনও ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সাংবাদিক নাছির উদ্দিন শোয়েব লিখেছেন, ফিলিস্তিনের জন্য আর চোখের পানি নয়, জেগেছে এবার লক্ষ-কোটি জনতা। গর্জে ওঠেছে বাংলাদেশ।

ব্যাংকার আবদুল মালেক লিখেছেন, জায়নিস্ট ইহুদী এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের বদ নজর থেকে মুক্তিপাক ফিলিস্তিন এবং আমার প্রিয় দেশ। মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, দল মত নির্বিশেষে সবাই এক মোহনায়...নির্যাতিতদের পক্ষে, জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়িয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ...। সাংবাদিক নোমান সেলিম লিখেছেন, আজকের পুরো বাংলাদেশের অভিন্ন কন্ঠ: ফিলিস্তিন স্বাধীন করো---

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, এভাবেই আগামীতে একটি জাতীয় সরকার পাবো আমরা।। ঐক্যের অনন্য নিদর্শন গড়লো বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের পর সম্পর্কে যেটুকু টান পড়েছিল, আজ সেটুকু আবার ফিরে পেল। এত্ত মানুষের জমায়েত আগে কখনো হয়নি। সব দল মত ভুলে এক মঞ্চে ছিলেন জাতীয় ব্যক্তিত্বরা। ইজ্ঞিনিয়ার সেলিম রহমান লিখেছেন, ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় এবং মানবতার জন্য আমারা ঐক্যবদ্ধ সবসময় তবে রাজনৈতিক ভাবে ভিন্নতা আছে এবং থাকবে। হে আল্লাহ গাজাকে তুমি হেফাজত করো স্বাধীন করো।

ব্যবসায়ী নুরুল্লাহ কায়সার লিখেছেন, ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশ আরেকটি ইতিহাস রচনা করলো। এতো আমাদের ঐক্যের বাংলাদেশ। প্রবাসী এস এম মামুন হোসেন লিখেছেন, আমাদের এই আবেগ জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে না। তবুও পৃথিবী জেনে যাক বাংলাদেশের মানুষ কখনো কোন অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করেনি। মানবাধিকার কর্মী সানাউল্লাহ লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, এক বিরল ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম আজ। এরকম ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ কখনও দেখা যায়নি। ফ্রি ফ্রি ফ্রি প্যা’লে’স্টাইন। রকবিুল ইসলাম রনি লিখেছেন, মাশাআল্লাহ এত বড় জনসমুদ্রের মহা সমাবেশ আর এত চমৎকার সমাবেশ আমি কখনো দেখিনি! মার্চ ফর গাজা, ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ, মুসলমান জিন্দাবাদ।

ক্রীড়া সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাসুম লিখেছেন, মার্চ ফর গাজা উপলক্ষে ঢাকা আজ উপচে পড়া জনস্রোত প্রত্যক্ষ করে। লাখো লাখো মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আশা করি গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনো বেঁচে থাকা বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু আল্লাহর গজব ছাড়া নেতানিয়াহু তথা ইসরাইলীদের এই বর্বরতা থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষার আশু কোন উপায় নেই। কারণ দুনিয়ার সব পরাশক্তি প্রত্যক্ষ নয়তো পরোক্ষে ইসরাইলের সাথে। আল আমিন লিখেছেন, লোকের সংখ্যা কত এটা জানলে সবাই অবাক হয়ে যাবে। এই প্রথম ৪ জন ব্যক্তির ক্যাম্পেইনে বাংলাদেশে এত বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। এটা রাজনীতির জন্য বড় বার্তা। আফরিন জাহান লিখেছেন, আপনি বাংলাদেশের মানুষকে ঠকবাজ বলতে পারেন, করাপটেড বলতে পারেন, খুনি বলতে পারেন, কালোবাজারি বলতে পারেন,অসৎ বলতে পারেন, তবে আর যাই হোক এই জাতিকে আপনি অমানবিক বলতে পারবেন না, এটার প্রমাণ আজকের মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি... কামরুজ্জমান লিখেছেন, চেতনার নামে জাতিকে বিভক্ত করার দিন শেষ। আমাদের পরিচয় একটাই, আমরা বাংলাদেশী মুসলমান।