আগামী তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি আরও জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ, বদলি, অন্যান্য বিষয় এবং আদালতের কন্ট্রোল ও শৃঙ্খলা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে ন্যাস্ত থাকবে। এছাড়া মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোসহ আরও কিছু বিষয়ে জানান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, গণভোট আইন আমরা খুব দ্রুত করতে যাচ্ছি। এই উইকে (এ সপ্তাহে) করে ফেলবো। ধরেন আগামী তিন বা চার কার্যদিবসের মধ্যে হয়ে যাবে। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ সময় তিনি ভারতকে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে ফেরতের আহ্বান জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ভারতের উচিত হাসিনাকে ফেরত দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায়বিচারের আকাক্সক্ষাকে সম্মান জানানো।
আসিফ নজরুল বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য রোমের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনোভাবে যেতে পারি কিনা সেটা বিচার-বিবেচনার জন্য আমরা অচিরেই বসে সিদ্ধান্ত নেবো।
এদিকে আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে। পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এটা আমাদের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ছিল। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সকল দল এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে। বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি পৃথক সচিবালয় লাগবে। পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত আইনের একটি অনুমোদন এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে করেছিলাম। আজকের বৈঠকে এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, কন্ট্রোল বলতে-নিম্ন আদালতে বিচারকদের পদায়ণ, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়াদি, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়াদি, নিম্ন আদালতে বিচারকদের নিয়োগ, কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ- সমস্ত কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে। আইন মন্ত্রণালয় যেটা করতো সেটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র বিচার কার্যে নিয়োজিত যারা রয়েছেন। তাদের কন্ট্রোল, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়াদি সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে। বিচার বিভাগে অন্য যারা আছেন। তারা কোনো কোনো জায়গায় প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেন। নির্বাচন কমিশন, দুদক, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরণের প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা, নিম্ন আদালতে বিচারকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও তারা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।
নিম্ন আদালতে বিচারকরা যে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, তাদের কাজের শৃঙ্খলা, ছুটির বিষয়াদি এটা আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। শুধুমাত্র নিম্ন আদালতের বিচারকরা যারা আছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ, কন্ট্রোল , শৃঙ্খলা , ছুটি জনিত বিষয়াদি উচ্চ আদালতে হাতে চলে যাবে। উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। এটা করার বড় কারণ-বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রচ-ভাবে দেখেছি নিম্ন আদালতে যারা বিচারক ছিলেন। তাদেরকে আইন মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল করতো। আইন মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায় নিম্ন আদালতের বিচারকরা জামিন দেবেন কি দেবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিতেন। এমন অভিযোগ আমরা শুনতাম, দেখতাম। এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর। এই অবস্থার অবসান ঘটবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক রায় রয়েছে। আবার ফিরে এসেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাবেক এক প্রধান বিচারপতি এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। যার সুযোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে বাতিল করে। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে দেয়া রায় বাতিল হয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ভূমি ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত ও নীতিগত অনুমোদন হয়েছে আজ। গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে উপদেষ্টা পরিষদের ৫১টি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ টেলিযোগাযোগ সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু আরও আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
প্রেস সচিব জানান, এছাড়া আমদানি নীতি নিয়ে আলাপ হয়েছে সভায়, সেটি আরও অধিকতর আলোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই গনভ্যুত্থানের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠানো ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এটা নিয়েও আরও আলোচনা হবে। উপদেষ্টা পরিষদে মোট ২৫১টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপিত হয়েছে এবং আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ৩৯৪টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।