মানুষের হাত-পা ও নাড়িভুঁড়ি কেটে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি কখনো ফিরে আসুক; এটা বাংলাদেশের কেউ আর চায় না বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী শাসনামলের গুম-খুন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বাংলাদেশ এখন শত হাজারও তরুণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। এই দেশকে এই জেনারেশন নতুনভাবে দেখতে চায়। আমরা কখনোই এখানে আবার গুম-ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি ফেরত আসুক কিংবা মানুষের হাত-পা নাড়িভুঁড়ি কেটে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আর কখনো ফিরে আসুক; এটা বাংলাদেশের কেউ আর চায় না। সে কারণেই আজকের এই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা। ইনশআল্লাহ আইনসম্মত উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে চলার সময়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব বাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্য, যারা উত্তরাস্থ টিএফআই সেলসহ গোপন বন্দিশালায় ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ তৎকালীন সরকারের কর্মকা-ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন; সেসব লোকদের আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। এমন হাজারও অভিযোগের মধ্য থেকে কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সেসবের ব্যাপারে আমরা ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি।

জেআইসি প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর বা ডিজিএফআইয়ের কিছু সংখ্যক বিপদগামী সদস্য, যারা জেআইসি নামক যে সেন্টারটি রয়েছে সেই সেন্টারটিকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক বন্দিদের গোপন কারাগারে আটক রেখেছিল। এ নিয়ে আলাদা তদন্ত প্রতিবেদন ও ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) আমরা দাখিল করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ র‌্যাব-ডিজিএফআইয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি আমরা। এর মাধ্যমে একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, অপরাধ যারা করবেন, যারা আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবেন, অপরাধীকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটা ন্যায়বিচারের দাবি।

তিনি বলেন, জনগণের বেতনে ইউনিফর্ম পরে যারা গুমের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ও অভিযুক্ত বিভিন্ন বাহিনীতে সম্পৃক্ত থাকলেও কর্মকর্তাদের অপরাধে দায় ব্যক্তি নিজের, এর দ্বায় কোনো বাহিনীর বা প্রতিষ্ঠানের নয়। তিনি বলেন, গুমের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদ ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদসহ অন্যান্য আসামিদের মধ্যে অধিকাংশ র‌্যাবে ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা। যাদের কয়েকজন এখন নিজ নিজ বাহিনীতে কর্মরত।

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিরোধী ঘরানার লোকদের গুম করে কথিত আয়নাঘরে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। এদিন সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ দুটি জমা দেন প্রসিকিউশন। পরে শুনানি শেষে দুটি অভিযোগই আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

এর মধ্যে টিএফআই সেলে গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা-তারেক সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া জেআইসিতে গুমের ঘটনায় এই দুজনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।