বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, গণতন্ত্র বিশ্বাস করলে পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে। কারণ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোট মূল্যায়িত হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে কোন প্রার্থী ১ লাখ ভোট পেয়ে মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ফলে ১ লাখ ভোট নষ্ট হয়ে যায়। ঐ ১ লাখ মানুষের মতামতকে উপক্ষো করা হয়। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে একটি ভোটও নষ্ট হবে না। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে না। সন্ত্রাস দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করার পথ বন্ধ হবে, কেউ অস্ত্রের মহড়া দিতে পারবে না। কমিশন একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারবে। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাত্রবাড়ী-শ্যামপুর থানার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যাত্রাবাড়ী- শ্যামপুর থানা আমীর যাকীর হুসাইনের সভাপতিত্বে এবং থানা বায়তুলমাল সম্পাদক আব্দুল আহাদ জিহাদী’র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নাজির আহমেদ ভূইয়া। এছাড়াও সম্মেলনে থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধান সংস্কার না করে, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করা যাবে না উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সংবিধান সংস্কারে আজকে যারা আপত্তি করছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে যারা আপত্তি করছে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও গণভোটের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতার বৈধতা নিশ্চিত করেছেন। গণভোটে তারা ভয় পায়, কারণ তারা জানে গণভোট হলে জনগণ পিআর পদ্ধতিতের পক্ষে ভোট দিবে, সংবিধান সংস্কারের পক্ষে ভোট দিবে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পক্ষে ভোট দিবে। তাদের মাঝে ভয় এবং আতঙ্ক কাজ করে, পিআর পদ্ধতি চালু হয়ে গেলে ভোট চুরি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল দিতে পারবে না, একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে পারবে না। এজন্য জনগণ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলেও তারা পিআর পদ্ধতি মেনে নিতে পারছে না। জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে অবশ্যই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিয়ে নির্বাচন দিলে ১৮ কোটি মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। যারা দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করতে পারেনি, তারা একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়। এজন্য তারা রাষ্ট্রের সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের দাবি করে না। তাদের একটাই দাবি নির্বাচন নির্বাচন। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে? প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণ নির্বাচন চায় না। কারণ স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়ে আসছে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে বারবার ক্ষমতার পালাবদল হলেও জনগণের ভাগ্যের বদল হয়নি, হবে না। প্রচলিত পদ্ধতিতে তারাই নির্বাচন চায়, যারা শেখ হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট হতে চায়। যেই পদ্ধতিতে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, সেই পদ্ধতি বহাল থাকলে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। আর কোনো ফ্যাসিবাদের হাতে জাতির ভবিষ্যৎ ছেড়ে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ বিকলাঙ্গ করে রেখে গেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী জাতি রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। কিন্তু সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন না করে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার পায়তারা করছে। জাতি সেটি মেনে নিবে না। অপরদিকে নামমাত্রে গণহত্যার বিচার শুরু হলেও বিচারের দৃশ্যমান কোন আলামত এক বছরেও জাতি দেখতে পারেনি। জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে এবং দেশের ৭১ শতাংশ জনগনের দাবির প্রেক্ষিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। সকল দল ও মতের লোকজন স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করতে পারছে। জুলাই চেতনা ছিল বৈষম্যহীন, দূর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত একটি সুখ-সমৃদ্ধ ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি একটি দলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী- চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট করে সারাদেশে তারা নিজেরা-নিজেরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। চাঁদার দাবিতে নিজেরা নিজেদের দলীয় লোকজনকে পাথর দিয়ে থেঁতলে থেঁতলে মানুষ হত্যার সংস্কৃতি তারা চালু করেছে। যারা মব সৃষ্টি করছে, নৈরাজ্য করছে, তাদের তরুণ প্রজন্ম ভোটের মাধ্যমেই বয়কট করবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তরুণ প্রজন্ম জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নিরব বিপ্লব সংঘটিত করবে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। এজন্য তিনি তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।