হিজরী নববর্ষের ১ম মাস মহররমের তৃতীয় দিন আজ। এ মাসের দশম তারিখ হলো আশুরা। আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে গোটা মহরম মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেড়ে গেছে। আশুরার দিনে পৃথিবীতে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে এমন একটি ঘটনার অবতারণা হয়েছিল যার বিবরণ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন। এরশাদ হচ্ছে, স্মরণ কর, যখন আমি ফেরাউনী সম্প্রদায় হতে তোমাদেরকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদের পুত্রগণকে হত্যা করত ও কন্যাগণকে জীবিত রেখে তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত এবং এতে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহাপরীক্ষা ছিল এবং যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধাবিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফেরাউনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছিলাম এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৯-৫০)। এই আয়াতে হযরত মুসা (আ:) ও বনী ইসরাইলীদের নিরাপদে নীলনদ অতিক্রম করা, ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীর ডুবে মরার কাহিনী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ভাষায় বিবৃত হয়েছে। এই কাহিনীর সুদূরপ্রসারী দিক নির্দেশনার মাঝে যে দু‘টি বিষয় খুবই প্রণিধানযোগ্য তা হচ্ছে, সত্য চিরকাল বিজয়ী ও সমুদ্ভাসিত থাকে। মিথ্যা ও অসত্যের শক্তি দম্ভ অহংকার ও দর্প ক্ষণিকের জন্য উচ্চকিত হলেও পরিণামে সত্যের তেজোদীপ্ত আঘাতে মিথ্যা ও অন্যায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ তাসের ঘরের মত ইতিহাসের অতল তলায় হারিয়ে যায়, নিঃশেষ হয়ে যায়। কোন অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীই শাস্তির নিগড় থেকে নিজেদেরকে ছলেবলে কৌশলে রক্ষা করতে পারেনি। যেমনটি আমরা জালিম ও অবিশ্বাসী ফেরাউনের জীবনে দেখতে পাই এবং একইভাবে ইয়াজিদের শাসনামলেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর এ জন্যই ইয়াজিদের মৃত্যুর পর তার বালক পুত্রের নিহত হওয়ার সাথে সাথে সাধের গড়া সাম্রাজ্যের প্রতিটি পত্র খসে পড়েছিল এবং সেখানে জেঁকে বসেছিল মারওয়ানী কূটমন্ত্রণার কুটিল জলসা। তাই আজ বিশ্ব জোড়া মুসলিম মিল্লাতের উচিত ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মহিমায় বলীয়ান হয়ে সত্যাশ্রয়ী জীবনের রজ্জুকে আঁকড়ে ধরা এবং মর্সিয়া ক্রন্দনের সামিয়ানাকে ছিন্নভিন্ন করে সত্যের ঝান্ডাকে সমুন্নত করা। কেননা এ পথেই রয়েছে মুক্তি ও নিষ্কৃতি, স্বস্তি এবং তৃপ্তি।

মহররম মাসের অনেক দিক দিয়ে গুরুত্ব বেশি। এ মাসে রোজা রাখার ফজিলতও অনেক বেশি। হাদিসে এসেছে, হযরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’-জামে তিরমিযী ১/১৫৭

মহররম মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহীহ বুখারী : ১/৪৮১)।