প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এগিয়ে এসেছে। এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় থাকতে চায় কমিশন। অনেক কাজ আমরা ইতোমধ্যে শেষ করেছি। যেসব কাজ বাকি আছে, তা সবাই মিলে শেষ করতে হবে। আমাদের শপথ এই জাতিকে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়া বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
গতকাল রোববার ঈদুল আজহার পর নির্বাচন ভবনে আয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিইসি এ কথা জানান। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সিইসি বলেন, কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন, এটা কর্মকর্তাদের বলেছি আজ। জাতির উদ্দেশে বলতে চাই, কেউ যদি মনে করেন ব্যালট বাক্স লুট করে নিয়ে যাবেন, কেন্দ্র দখল করে জিতে যাব, তারা দিবাস্বপ্নে আছে। এটা এবার হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। সবাই সুন্দর নির্বাচন চায় বলছে। তাহলে আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেন। কিছু লোক আছে যারা মতলববাজ, নির্বাচন এলে পথ থেকে ভোটারদের সরিয়ে দেবে, ভোট বাক্স লুট করে নিয়ে যাবে, সেই সুযোগ এবার পাবে না। এটার আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
নাসির উদ্দিন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের যে বিষয়টি এসেছে, যখন ই হোক; ফেব্রুয়ারিতে হোক, এপ্রিলে হোক আমাদের তো প্রস্তুত থাকতে হবে। আগে ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলা হয়েছিল। এখন আবার নতুন ডাইমেনশন আসছে। লন্ডনে যে ঘোষণা হয়েছে আপনারা যতটুকু জানেন আমিও ততটুকু জানি। ভেতরে কি হয়েছে তা জানি না। আমার কাছে আনসাইন একটা কপি এসেছে, সেটাও কতটুকু তা তো জানি না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে। আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, যদি সত্যি হয়ে থাকে, এখন এক-দেড় ঘণ্টার আলোচনা হয়েছে, শুধু একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে বোঝা সম্ভব না। কাজেই সেগুলো আমাদের জানতে হবে। আমাদের নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ইসি হয়ত একটা ডেট ঘোষণা করবে।
তিনি বলেন, নরমালি বিবেচনা করলে হবে না। এটা একটা বিশেষ পরিস্থিতি। বিশেষ পরিস্থিতি বিশেষ ধরনের সরকার। শাসনতন্ত্র যেটা আছে, সেটা হলে তো সংসদ ভেঙে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে করে ফেলতে পারতাম। যেহেতু এখন বিশেষ ধরনের সরকার, বিশেষ পরিস্থিতি, সরকার সংস্কারের বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। এগুলো নিয়ে সরকারই আলোচনা করছে এখন পর্যন্ত। আমাদের ধারণা হচ্ছে, আশা করছিলাম যে সরকারের পক্ষ থেকে একটা তারিখ ঘোষণা হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের একটু কথাবার্তা হতে হবে কিন্তু নির্দেশনার জন্য নয়। আমরা কারো নির্দেশনায় কাজ করব না। এটা একদম পরিষ্কার। আমরা কারো হুকুমে, কারো নির্দেশনায়, পরিচালনায় আমরা কাজ করব না। এটুকু আজ আমাদের কর্মকর্তাদের বলেছি।
নির্বাচন কবে এটা কি সরকার থেকে নিশ্চিত করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আরপিওর ১১ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, নির্বাচন কমিশন গেজেটের মাধ্যমে তারিখ ঘোষণা করবে। ছয় মাস আগে অমুক তারিখে নির্বাচন হবে এটা বলার বিধান তো এখানে নেই।
নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের বুঝতে হবে পরিস্থিতিটা বিশেষ পরিস্থিতি। না হলে প্রধান উপদেষ্টা কি এতদিন ধরে দলগুলোর সঙ্গে এমনিই আলোচনা করছে। সবাইকে নিয়ে উনি নির্বাচন করতে চান, যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়।
রোডম্যাপ কবে দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লন্ডনে যা আলোচনা হয়েছে এর বাইরে আমার কোনো নলেজ নেই। প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন আমি মিডিয়ায় দেখেছি। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো আলোচনা হয়নি। আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবছি, যখনই হয় যেন ভোট করতে পারি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ভাব বুঝতে পারব কখন ডেট দিতে হবে।
সিইসি বলেন, আমরা কোনো টার্গেট ফিক্সড করিনি। যখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে তখন তারিখ নিয়ে আলাপ হবে। সরকারের পরিবর্তিত কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না, এটা জানতে হবে। রমযানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলেই আমরা বুঝতে পারব। সরকারের থেকে ধারণা পেলে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা ডিসেম্বর থেকে জুন, প্রথম যখন সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, সেটা ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছি।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে ইসি থাকবে রেফারির ভূমিকায়। যারা খেলবে, খেলুক; যারা জিতবে, জিতুক। কিন্তু আমাদের কাজ হবে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া। সেই দায়িত্ব পালনে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
সিইসি বলেন, ‘রমযানে আপনারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। আজ আবারও বলছি, আমাদের শপথ হোক কোনো দলের প্রতি পক্ষপাত না করে, কোনো লেজুড়বৃত্তির সুযোগ না দিয়ে, আইন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করার।’