ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর ইসরাইলী নৌ-বাহিনী মানবিক মিশন গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরের কিছু জাহাজ ঘিরে ফেলেছে। ফ্লোটিলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার ইসরাইলী জাহাজ তাদের বহরের কিছু জাহাজ ঘেঁষে ‘বিপজ্জনক ও ভীতিকর আচরণ’ করছে। গতকাল বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ১১৮ মাইল দূরে থাকা সুমুদ ফ্লোটিলা জাহাজের বহরকে ইসরাইল ডুবিয়ে দেওয়ার হুমকির পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই জাহাজে বাংলাদেশের বিশ^ বিখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম রয়েছেন। সংগঠনটি জানিয়েছে, দুটি ইসরাইলী যুদ্ধজাহাজ দ্রুত এগিয়ে এসে ফ্লোটিলার নৌকা আলমা ও সিরিয়াসকে ঘিরে ফেলে। এসময় সব নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। থিয়াগো অ্যাভিলা নামে ফ্লোটিলার এক কর্মকর্তা এটিকে ‘সাইবার আক্রমণ’ হিসেবে গণ্য করছেন। যদিও পরে তারা স্বল্পমাত্রায় যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করেন। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ৪০টির বেশি বেসামরিক জাহাজ রয়েছে। পুরো বহরে অন্তত ৫০০ জন রয়েছেন, যাতের অনেকেই সংসদ সদস্য, আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট। সুইডিশ পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন এই বহরে। ফ্লোটিলার কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরাইলের এই শত্রুভাবাপন্ন আচরণে ৪০টির বেশি দেশের নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তারপরও ইসরাইলীরা অবরোধ তৈরি করলে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। গাজামুখী যাত্রা শুরুর পর সম্প্রতি ফ্লোটিলার বহর ড্রোন হামলার শিকার হয়। ড্রোনগুলো স্টান গ্রেনেড ও রাসায়নিক পাউডার ফেলে নৌকাগুলোর ক্ষতি করে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় গাজার উপকূলের নৌযান অবরোধ বৈধ এবং তারা যেকোনো উপায়ে ফ্লোটিলার বহর আটকে দেবে। ইতালি ও স্পেন সম্ভাব্য উদ্ধার বা মানবিক সহায়তার জন্য নৌবাহিনী পাঠিয়েছে। তবে তারা সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না। তুর্কি ড্রোনও জাহাজগুলোকে অনুসরণ করেছে। ইতালি জানিয়েছে গাজার ১৫০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পৌঁছলে তাদের নৌ-যান বহরটিকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দেবে। স্পেনও একই ইঙ্গিত দিয়েছে।

গতকাল বুধবার নৌবহরের আয়োজকদের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী অধিকার বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, ফ্লোটিলার বহর আটকানো হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ও সমুদ্র আইনের আরেকটি লঙ্ঘন হবে। কারণ গাজার জলসীমায় ইসরাইলের আইনগত কর্তৃত্ব নেই। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, আন্তর্জাতিক ওই নৌবহরের কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় সচল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ইসরাইলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া দেননি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের এই নৌবহরে ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌকা ও জাহাজ রয়েছে। এসব নৌযানে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী বোঝাই করে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০০ জন নাগরিক। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। সুমুদ ফ্লোটিলা বহরটির আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। যদিও জাহাজের বহরকে ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এদিকে, ইতালি ও স্পেন উদ্ধার কিংবা মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফ্লোটিলা নৌবহরে নৌযান মোতায়েন রেখেছে। তবে কোনো ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়াবে না বলে জানিয়েছে তারা। নৌবহরটির গতিবিধি নজরদারিতে ড্রোন ব্যবহার করছে তুরস্কও। তবে ইতালি ও স্পেন বলেছে, গাজা উপকূল থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল (২৭৮ কিলোমিটার) দূরে পৌঁছালে নিরাপত্তার কারণে তারা বহরটির অনুসরণ বন্ধ করে দেবে। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা।