ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মেট্রোরেলে র‌্যাপিড পাসের সংকট চলছে। এ কারণে মেট্রোরেলে ভ্রমণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকের একক পাস নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাত লাখ ২৮ হাজার এমআরটি পাস কেনে। কিন্ত ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেগুলো বিক্রি হয়। এরপর আর যাত্রীরা এমআরটি পাস কিনতে পারেনি। এমআরটি পাস নেয়ার প্রত্যাশায় প্রতিদিনই স্টেশন গুলোতে যাত্রীরা দীর্ঘ লাইন ধরেন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয়।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, মেট্রোরেলে তিন ধরনের কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে স্থায়ী কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে র‌্যাপিড ও ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস। অস্থায়ী হিসেবে একক যাত্রার পাস বিক্রি হয়। এর মধ্যে এমআরটি বা র‌্যাপিড পাসে যাতায়াত করলে টিকিটের মূল্যে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। এ কারণে এ কার্ডের জন্য দিনে হাজারো চাহিদা রয়েছে। তবে গণপরিবহন মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধে স্থায়ী কার্ড র‌্যাপিড পাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু এ কার্ডের চাহিদা মেটাতে পারছে না ।

কার্ডের চাহিদা মেটাতে পারছে না মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার পাস কিনে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।

ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা জানান, ছয় মাস ধরে এভাবেই চলছে। এখন মেট্রোরেলে দিনে চার লাখের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। মোট যাত্রীর প্রায় ৬০ শতাংশই র‌্যাপিড ও এমআরটি পাস ব্যবহার করে। বাকি ৪০ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করে একক যাত্রার কার্ড। কিন্তু এখন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করার মতো র‌্যাপিড ও এমআরটি পাস আছে খুব কম। ফলে প্রতিদিনই যাত্রীদের কার্ড কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। অথচ ডিটিসিএর ঠিকাদার সময়মতো কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, এ স্টেশনে একক যাত্রার টিকিট কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। তারা একেক করে টিকিট কিনছেন, তারপর মেট্রোরেলে ভ্রমণ করছেন। কিন্তু স্টেশনে স্থায়ী কার্ড বিক্রি করতে দেখা যায়নি।

র‌্যাপিড পাস নিয়ে সচিবালয়ের ষ্টেশনে তাহমিনা আক্তার নামের এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক সংগ্রামকে জানান , র‌্যাপিড পাস এখন সোনার হরিণ। দুজনের জন্য কার্ড নিতে গেলে সৌভাগ্যক্রমে পেলাম এই সোনার হরিণ। শুনলাম এই কার্ড এতই দুষ্প্রাপ্য যে দিনে শুধু ৩০ মিনিটের জন্য এই কার্ড দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ১টা আর দুপুর সাড়ে ৩টা হতে পৌনে ৪টা পর্যন্ত ( শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশন)।’

শাহবাগ স্টেশন থেকে স্থায়ী কার্ড কিনতে আসা আসলাম মিয়া দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমার একটি স্থায়ী কার্ড আছে। স্ত্রীর জন্য আরেকটি কার্ড কিনতে এসেছি । কিন্তু তাকে কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে এখন কার্ড নেই।

তাজুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘চার মাস আগে শেওরাপাড়া একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছি। এরপর থেকে মেট্রোরেলেই যাতায়াত করি। কিন্তু মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ড না পাওয়ায় প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার টিকিট কিনতে হয়। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগও হচ্ছে।’

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। এখন ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল করে। এ গণপরিবহনে ভাড়া পরিশোধে ডিটিসিএ একটি প্রকল্পের আওতায় জাপানের নিপ্পন সিগন্যাল কোম্পানি থেকে তিন লাখ ১৩ হাজার একক যাত্রার এবং সাত লাখ ২৮ হাজার এমআরটি পাস কেনে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেগুলো বিক্রি হয়। এরপর আর যাত্রীরা এমআরটি পাস কিনতে পারেনি।

তবে যাত্রী চাহিদা মেটাতে গত জানুয়ারিতে প্রাইম পাওয়ার সলিউশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ র‌্যাপিড পাস সরবরাহের দায়িত্ব দেয় ডিটিসিএ। তারা ইন্দোনেশিয়া থেকে কার্ড আমদানি করে ডিএমটিসিএলকে দিচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে তাদের সব কার্ড সরবরাহের কথা। তবে এখন পর্যন্ত তারা মাত্র এক লাখ ১৮ হাজার র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করতে পেরেছে।

মে্েট্রারেল ষ্টেশনের একজন কাউন্টারম্যান দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, মেট্রোরেলের র‌্যাপিড কার্ড সংকট কমাতে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কার্ড চলে আসছে। বাকি কার্ড চলতি মাসের মধ্যেই চলে আসবে।