# আতঙ্কে ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা

# যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

# ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত করতে পারেনি ইসরাইল

# ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে: এরদোগান

ইসরাইল-ইরানের চলমান সংঘাতের মধ্যে গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জানিয়েছেন, চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের পাশাপাশি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও ইরান দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে। তিনি বলেছেন, ‘ইরান, এর জনগণ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা ব্যক্তিরা কখনোই এই জাতির সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ, ইরানিরা আত্মসমর্পণকারী নয়। এ কথা জানান তিনি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তার এই বক্তব্য পাঠ করা হয়। উপস্থাপক নিজেই এটি পড়ে শোনান। তিনি আরও বলেছেন, ইসরাইলকে ভুলের মাশুল দিতে হবে।

এদিকে আতঙ্কে ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইরান দাবি করেছে ইসরাইলে এখন পর্যন্ত ৪ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং দেশটির ২৮ আকাশযান ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইল এখনো ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত করতে পারেনি। অপরদিকে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তইয়ব এরদোগান বলেছেন, ইসরাইলের গুন্ডামি ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে অবশ্যই ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ইরানকে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তার ভাষণে জানান, ‘এই জাতি কারও চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যারা ইরান ও এর ইতিহাস জানে, তারা বোঝে, ইরানিদের সঙ্গে হুমকির ভাষায় কথা বললে কোনো ফল হয় না। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বললেন, ইরানিরা আত্মসমর্পণকারী নয়।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে খামেনি বলেন, ‘আমেরিকানদের জানা উচিত, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তার পরিণতি হবে অপূরণীয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মঙ্গলবারের এক মন্তব্যের বিষয়ে বলেন, যারা বুদ্ধিমান এবং ইরান, ইরানি জাতি ও এর ইতিহাস সম্পর্কে জানেন, তারা কখনও হুমকির ভাষায় এই জাতির সঙ্গে কথা বলবেন না। কারণ ইরানি জাতি কখনও হুমকির কাছে মাথানত করে না। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকানদের জানা উচিত, যেকোনও মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। যার পরিণতি তারা সহজে সামাল দিতে পারবে না।

এদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাত ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া নিয়ে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। বুধবার আল জাজিরাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোনও তৃতীয় পক্ষ ইসরাইল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়লে, সেটি পূর্ণমাত্রার এক সংঘাতের দিকেই যাবে। আর সেটি কেবল এই অঞ্চল নয়; বরং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। ইসমাইল বাঘাই বলেন, ইরান আপাতত কেবল ইসরাইলের ভূখ-কে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ওপর মনোযোগ দিচ্ছে এবং তারা বিশ্বাস করে, প্রতিবেশী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের ভূখ- ব্যবহার করে ইরানের ওপর হামলা চালাতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কূটনীতি কখনই শেষ হয় না।’’ তবে তেহরান এখন আর ওয়াশিংটনের ওপর ভরসা করে না বলেও জানান তিনি। ইরানি এই কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়াসহ সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করছে ইরান। কারণ তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। আমরা প্রত্যাশা করি, যারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা যেন এই হামলার নিন্দা ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।

টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হেয়ছে, ইরানের সঙ্গে সংঘাতের মাত্র ৬ দিনের মাথায় অস্ত্র সংকটে ভুগছে ইসরাইল। বুধবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ শেষের পথে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসে শুক্রবার ( ১৩ জুন) আকস্মিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এরপর থেকে, ইসরাইলে ৩৭০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ঠেকাতে ইসরাইলের ব্যাপকভাবে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, এতে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র মজুদে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই ঘাটতি ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় দেশটির ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস আগে থেকেই ইসরাইলের ‘অ্যারো’ ইন্টারসেপ্টরের ঘাটতির কথা জানে এবং সেই অনুযায়ী ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে আসছে। কিন্তু সেই মজুদও সীমিত। ইসরাইলে অনেক অস্ত্র পাঠানোর পর, এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইন্টারসেপ্টর ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তার বরাতে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের হামলার বর্তমান গতি বজায় থাকলে ইসরাইল আর মাত্র ১০-১২ দিন তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে বা যুদ্ধে জড়িত হতে হবে। সূত্রটি আরও বলেছে, ইসরাইলকে তারা কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে চায় তা নির্বাচন করতে হবে এবং যেগুলো খোলা জায়গায় পড়বে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। যদিও ইসরাইল ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে বড় ধরণের হামলার মুখোমুখি হলে জনবহুল এলাকা বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর দিকে পরিচালিত সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসরাইল কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত কিন্তু যুদ্ধাস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না। আইডিএফ বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইলে ছোড়া বেশিরভাগ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ইরানের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে।

ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা: ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে ইসরাইলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বুধবার থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দূতাবাস। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ ঘোষণা দেয়। আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সব মার্কিন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসস্থানের ভেতরে এবং কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেবেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেরুজালেমে অবস্থিত দূতাবাসের পাশাপাশি, তেল আবিবে কনস্যুলার পরিষেবাও শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। দূতাবাস আরো জানিয়েছে যে, বেসরকারি মার্কিন নাগরিকদের ইসরাইল ত্যাগ করতে সহায়তা করার বিষয়ে এই মুহূর্তে তাদের কোনো ঘোষণা নেই। ইসরাইলের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

৪ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: পাল্টাপাল্টি হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের দিকে ৪০০ টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, এছাড়া ইসরাইলে হামলার জন্য তেহরান কয়েক শ ড্রোন পাঠিয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর আজ বুধবার এসব তথ্য জানিয়েছে। নেতানিয়াহুর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইরানি হামলায় ইসরাইলে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮০০ জনের বেশি। ইরানের হামলার জেরে ৩ হাজার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। আর ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা ২৪০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি নারী ও শিশু।

ইসরাইলের ২৮ আকাশযান ভূপাতিত: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ইরানের সাম্প্রতিক এক সামরিক ঘোষণায়। তেহরান জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর ২৮টি আক্রমণকারী আকাশযান তারা ভূপাতিত করেছে। অভূতপূর্ব এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান-ইসরাইল সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের আলোচনা জোরালো হচ্ছে।

কি ধরণের আকাশযান ভূপাতিত হয়েছে?

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ও সামরিক সূত্র বলছে, ভূপাতিত ২৮টি আকাশযানের মধ্যে রয়েছে: হার্মেস (ঐবৎসবং) ড্রোন। এটি মূলত একটি দূরপাল্লার নজরদারি ও আক্রমণাত্মক ড্রোন, যা ইসরাইলিরা প্রায়শই গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় ব্যবহার করে। এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। ইরানি সূত্র দাবি করেছে, কয়েকটি ম্যানড বিমানও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। যদিও এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। বিশেষ মিশনের ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্ল্যাটফর্ম। ইরান বলছে, তারা ইসরাইলি ইলেকট্রনিক হামলার সক্ষমতা রোধ করেছে। যদিও ইরান এ ঘোষণাকে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বড় সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিষয়টি এখনো সাবধানতা সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের দাবি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরাইল জানিয়েছিল, মঙ্গলবার তারা ইরানে ৬০টির বেশি বিমান ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইলের জন্য কি বার্তা: ইরান বারবার দাবি করে আসছে যে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা— বিশেষ করে বাভার-৩৭৩ (ইধাধৎ-৩৭৩), খোরদাদ-১৫ (কযড়ৎফধফ-১৫), ও সাইয়েদ (ঝধুুধফ) ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক ও খুবই কার্যকর। এগুলোর মাধ্যমে ইসরাইলি হামলা প্রতিহতের দাবি সেই বার্তাকেই বিশ্বে পৌঁছে দিচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ: ইসরাইল যদি সত্যিই এতোগুলো বিমান হারিয়ে থাকে, তাহলে এটি একটি কৌশলগত ধাক্কা। এমন ক্ষয়ক্ষতি ইসরাইলি জনমত ও সামরিক পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ: চলমান সংঘাত যত তীব্র হবে, তত বেশি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা এতে সরাসরি জড়াবে কি না। ইরান পরোক্ষভাবে হয়তো ট্রাম্প প্রসাশনকে বলছে, ‘তোমার মিত্র ঝুঁকিতে, তুমি কি পাশে দাঁড়াবে?’ তবে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, একযোগে ২৮টি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করা সম্ভব হলেও এটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। তারা বলছেন- হয়তো অনেক ড্রোন ও পুনঃতথ্য সংগ্রহকারী বিমান ছিল যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রের গভীরে প্রবেশ করেছিল। ইরান কিছু সফলতা পেয়েছে, তবে সংখ্যাটি সম্ভবত অতিরঞ্জিত। ইরানের এই দাবি সত্য হোক বা আংশিক সত্য—এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, ‘আমরা প্রস্তুত এবং ইসরাইল আকাশেও নিরাপদ নয়’। মূলত এই পরিস্থিতি ইসরাইলকে আরও কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে। আবার বড় কোনো পাল্টা জবাবেরও ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে। এমনকি যুক্তরাস্ট্রকে এতে সরাসরি অংশ নিতেও বাধ্য করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া: ইসরাইলকে মার্কিন সাহায্য মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা দেন। সের্গেই রিয়াবকভ সতর্ক করে বলেন, ইসরাইলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা দেয়া হলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। সেজন্য ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা সরবরাহ করা, এমনকি বিষয়টি বিবেচনার টেবিলেও নেয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, মস্কো ইসরাইল ও ইরানের সাথে যোগাযোগ রাখছে। উল্লেখ্য, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ছয় দিন ধরে বিমান যুদ্ধ চলছে।

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত করতে পারেনি: ইসরাইল বেশ কয়েক দফায় হামলা করেও ইরানের পরমাণু স্থাপনার কিছুই করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (এইওআই) প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি। সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এইওআই প্রধান বলেন, দেশের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে। আমাদের কর্মীরা তাদের দায়িত্বে অবিচল রয়েছেন এবং নিজ নিজ দুর্গে অবস্থান করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইরানি জনগণের মধ্যে গর্ব ও শক্তি গভীরভাবে প্রোথিত। তারা কখনো শক্তির কাছে নতি স্বীকার করেনি বা আত্মসমর্পণ করেনি। শত্রুপক্ষের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে এইওআই প্রধান বলেন, সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়।

ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে: ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের গুন্ডামি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষা করা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, ন্যায়সঙ্গত এবং বৈধ।’ বুধবার রাজধানী আঙ্কারায় জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির সংসদীয় গ্রুপের বৈঠকে এ কথা বলেন এরদোয়ান। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ইরান এবং এই অঞ্চলে তার মিত্রদের লক্ষ্য করে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান হামলা নিন্দা করে এরদোয়ান বলেন, নেতানিয়াহু গণহত্যায় হিটলারের চেয়ে অনেক আগেই এগিয়ে গেছেন। আমরা আশা করি তাদের পরিনতি একই রকম হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজা, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং আমাদের প্রতিবেশী ইরানের বিরুদ্ধে এই অমানবিক আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এরদোয়ান ইসরাইলের কর্মকা-ের মানবিক ক্ষতির ওপরও জোর দিয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘গণহত্যায় বেসামরিক নাগরিক, খুন হওয়া নারী ও শিশুদের রক্ত কেবল ইসরাইলের অহংকারকে সমর্থনকারীদের হাত ও মুখেই নয় বরং যারা নীরব থাকে তাদের গায়েও লেগে আছে।’ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইরানে ইসরাইলের সন্ত্রাসী হামলার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্ক। আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠান তুরস্কের ওপর এই হামলার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে। এরদোয়ান আরও বলেন, আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি এবং নিচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সহিংসতার প্রতি বিশ্বব্যাপী নিষ্ক্রিয়তারও নিন্দা করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চোখের সামনে পরিচালিত আগ্রাসন দেখেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্রগুলো নীরব থাকে, এমনকি কেউ কেউ এই গুন্ডামি কর্মকা-কে সমর্থন করে। সংঘাতের বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে এরদোয়ান বলেন, ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করা বিশ্ব এবং মানবতার জন্য অপরিহার্য। আমাদের প্রতিবেশী ইরানসহ আমাদের অঞ্চলের সকল দেশকে এই ঘটনাগুলো থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে হবে।