জুলাই শহীদদের মায়েদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে একটাই দাবি আর কোন সন্তানকে যেন সরকার এভাবে হত্যা না করে। হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার চাই। “রক্তাক্ত জুলাই স্মরণে”আলোচনা সভায় এভাবেই বলছিলেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ নাফিসের সম্মানিত মা নাজমা আক্তার নাসিমা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্মিলিত নারী প্রয়াস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডক্টর প্রফেসর শামীমা তাসনীম, পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন বিভাগ, শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান অতিথি ছিলেন পারভীন সুলতানা হায়দার, উপাধ্যক্ষ, ঢাকা কলেজ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ নাফিসের সম্মানিত মা নাজমা আক্তার নাসিমা। সহ সভানেত্রী, সম্মিলিত নারী প্রয়াস, ডক্টর আবিদা সুলতানা ও ডা. ফাতেমা ইয়াসমিন, সমাপনী বক্তব্য দেন সেক্রেটারি সম্মিলিত নারী প্রয়াস ডক্টর ফেরদৌস আরা খানম, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্ট্যাডিজ ডিপার্টমেন্ট লালমাটিয়া মহিলা কলেজ।

এ উপলক্ষে সম্মিলিত নারী প্রয়াসের উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজন করা হয় রচনা প্রতিযোগিতা। দুইটি গ্রুপে মোট ৮১ শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগীতার অংশ নেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

কুরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। উদ্বোধনী বক্তব্যে সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভাপতি শামীমা তাসমিন বলেন, সারা পৃথিবীর সকল সম্মান একত্র করে দিলেও জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান দেখানো শেষ হবে না। যদি আবার কোনো যুদ্ধ হয় তবে এবার আমরা মায়েরা সামনের সারিতে থাকব। আর সন্তানদের রাখব মাঝের সারিতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা চলে গেলেও আমাদের শত্রু চারিদেকে রয়েছে।

ডক্টর আবিদা সুলতানা বলেন, জুলাই গণআন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন মেয়েরা। তারা তাদের ভাইয়দের বাঁচানোর জন্য পুলিশের গাড়ির সামনে দাড়াতেও কুন্ঠাবোধ করেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ঢাকা মেডিকেলের ভিতর থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল বের হয়। হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনে অনেকে আনন্দে কাঁদে আর শুকরানা সিজদা দেয়। স্বৈরাচারের জুলুম হয় আমার ও পরিবারের উপর। তখন মন খারাপ হলে বাবা বলেন, একদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবা তোমরা।

আর এক জুলাই যোদ্ধা মারফিয়া হাসান তার স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আমার কাছে প্রথম মনে হয় ওরা খাচ্ছে কি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের খাবার পৌঁছে দেই। আমি একজন মা শিক্ষার্থী নই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এদের একা ছেড়ে দেয়া যাবে না। তখন মনে হয়েছে এই ফ্যাসিবাদের মৃত্যু না হলে কাল আমার বাচ্চাদের জন্য একটা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি।

মালিহা নামলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তার জুলাইয়ের সময়কার কথা তুলে ধরেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ এবং আশপাশের সরকারের পোষা গুন্ডারা আক্রমণ করে। তারপর রাতভর পুলিশসহ ছাত্রলীগের গুন্ডাদের অত্যাচার চলতে থাকে।

এরপর জুলাই যোদ্ধাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় সেইসাথে রচনা প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

শহীদ নাফিসের মা নাজমা আক্তার নাসিমা বলেন, মৃত্যুর আগের রাতেও নাফিস বলে দেশের জন্য মারা গেলে অনেকে সম্মান করে। মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের কাছে এসব কথা শুনেছি বলে জানান তার মা। আমি রাজনীতি বুঝিনা এখন শুধু বিচার চাই। আমার এই ছোট নাফিস কখন যে দেশের সাথে মিশে গেছে তা বুঝতে পারিনি। আমি সকল শহীদের হত্যার বিচার চাই। আহত সন্তানদের যেন ঠিক মতো চিকিৎসা করা হয় এটাই আমার চাওয়া। নিঃশ্বাসে বেঁচে আছি, আসলে আমরা বেঁচে নাই।

প্রধান অতিথি পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, এই আন্দোলন শুধু প্রতিবাদ নয়, একটা বিস্ফোরণ। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।

সমাপনী বক্তব্য দেন ফেরদৌস আরা খানম, নতুন একটা জনমানুষের দেশ গড়ে উঠুক। সকল জায়গায় হাসিনার লোক বসে আছে। বিচার না হলে তারা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তিনি সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন।