টানা ৪০ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর নগর ভবনের প্রধান গেটসহ কয়েকটি বিভাগীয় কার্যালয়ের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নগর ভবনে সেবা কার্যক্রমে গতি ফিরতে শুরু করেছে। সব আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও সেবা প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল সোমবার নগর ভবনের সব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী আসলেও আসেননি প্রশাসক ও প্রকৌশলীরা। তাদের কার্যালয় রয়েছে তালাবদ্ধ অবস্থায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগর ভবনের প্রধান গেটের তালা এবং অন্যান্য দফতরের তালা খুলে দেওয়া হলেও এখনও তালাবদ্ধ ডিএসসিসির প্রশাসক শাহজাহান মিয়াসহ বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর কক্ষ। এদিকে নাগরিকসেবা চালু হলেও নগর ভবনে এখনও সাধারণ মানুষের তেমন আনাগোনা শুরু হয়নি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও নাগরিকরা সেবা চালুর কথা জানেন না বলে ভিড় কম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এত দিন দফতরে তালা থাকলেও মশক এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান ছিল।

এর আগে রোববার দুপুরে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকাবাসীর ব্যানারে করা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি নাগরিক সেবা চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরতদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। কিন্তু গতকাল প্রশাসক এবং প্রকৌশলীদের কার্যালয়ে দেখা যায়নি।

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সব রকম নাগরিক সেবা বন্ধ রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে, কুরবানির ঈদের আগে আগে জরুরি সেবাসমূহ চালুর ঘোষণা দেন ইশরাক হোসেন। এর ধারাবাহিকতায় নগর ভবনে টানা তিন দিন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। তখন থেকেই নাগরিক সেবা সচল রাখারও ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন তিনি। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা চলমান নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত করে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপতৎপরতা চালাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেন।

গতকাল নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। নগর ভবনের সিঁড়িতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করছেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে সরকার একগুঁয়েমি আচরণ করছে। রায় না মেনে তারা আদালত অবমাননা করে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত ফ্যাসিস হাসিনার আমলে দেখা গেছে। এই সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের দৃষ্টান্ত আশা করা যায় না।

খিলগাঁও ও ধলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে- সেখানে সেবা প্রত্যাশীদের কেউ আসছেন জন্ম সনদের জন্য, কেউ আসছেন মৃত্যু সনদের জন্য, কেউ বা আসছেন ওয়ারিশ সনদের জন্য। তারা দ্রুত সময়ের মধ্য কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন।

কথা হলে এক সেবাগ্রহণকারী বলেন, জন্ম নিবন্ধনের জন্য এসেছিলাম। কাজটি হয়ে গেছে। দ্রুতই হয়েছে। আগে এতো দ্রুত হতো না।

সকাল থেকেই বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে কর্মরতদের কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে, আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও নগর ভবনে খুব একটা ভিড় চোখে পড়েনি। যারা এসেছেন তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করে চলে যেতে পেরেছেন।

শুক্রবাদ থেকে আসা আয়েশা বেগম জানান, তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দিতে এসেছিলেন। খুব দ্রুত তার কাজ হয়ে গেছে। এতো দ্রুত সময়ে সেবা পেয়ে তিনি খুব খুশি।

বাসাবো থেকে এসেছেন মানছুরা বেগম। তিনি বলেন, ‘নগর ভবনের কার্যক্রম টানা বন্ধ থাকায় বিপদে পড়ে গেছিলাম। বাবা অসুস্থ। একটা অনুদানের টাকা জমা হয়েছিল। আজকে আবার আবেদন জমা দিয়ে আসলাম। স্যারেরা বলল কয়েদিনের মধ্যে টাকাটা পেয়ে যাব। এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।’

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো এবং দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তার সমর্থনকরা। ১৪ মে তারা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। একইসঙ্গে অন্যান্য সেবাদানকারী দফতরেও তালা দেন ইশরাক সমর্থকরা।