গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা এ হামলা করেছে অভিযোগ দলটির।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে এনসিপি। একইসঙ্গে জুলাই মাসের ‘গণহত্যার’ সঙ্গে জড়িতদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের দপ্তর বিভাগের যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এনসিপি জানিয়েছে, ‘ঢাকা মহানগর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুরসহ একাধিক স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।’ হাসনাতের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে এনসিপি’র ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হামলার আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী হাসনাত আবদুল্লাহকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়েছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এ হামলার সঙ্গে জড়িত।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাংলাফ্যাক্ট’ নামের একটি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত ৯ মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ওপর ৩৬টি হামলা হয়েছে। এসব হামলায় ৮৯ জন আহত হয়েছেন এবং ১ জন শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা ও অপেশাদারিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির অভিযোগ, ‘জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের বিচার কার্যকরভাবে না হওয়াই আজকের হামলার পথ তৈরি করেছে। সংগঠনটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এদিকে হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘হাসনাত ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘জুলাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’; ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ গণঅভ্যুত্থানে অনেক জাতীয় নেতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও ভারত প্রশ্নে কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছেন। এ সময় তারা অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। হাসনাতের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রোজোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা তাদেরকে চাঁদাবাজ, লুটেরা হিসেবে জানি। তারা এই জুলাই অভ্যুত্থানে ২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। নির্বাচন তো দূরে থাক, আমরা কোনো সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশের মাটিতেই দেখতে চাই না। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর যে হামলা, এটা পুরো জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর হামলা। জুলাই বিপ্লবীদেরকে এই সরকার নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি। তারা প্রোক্লেমেশন দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে এই জুলাই বিপ্লবীদেরকে হাইকোর্ট দেখাবেন না। তিনি বলেন, আমরা বলে দিতে চাই, দিল্লির প্রেসক্রিপশনে এ দেশে কোনো রাজনীতি হবে না। যদি আপনারা অবিলম্বে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে না পারেন, তাহলে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো আবারও ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসবে।
অন্যদিকে হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান। রোববার গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এনসিপি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে ৫৪ জনকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মাঝে মাঝেই জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটার সংখ্যা আপনাদের সহযোগিতায় কমে এসেছে। আস্তে আস্তে দেখবেন এটা কমে যাবে। যারাই দু-একটা এমন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যদি কেউ করার চেষ্টা করে, আমরা ঘটনা ঘটার আগেই যাতে ধরতে পারি- সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ইতালি সরকার বাংলাদেশ থেকে লিগ্যাল চ্যানেলে শ্রমিক নিতে আগ্রহী। তিনি বলেন, তারা (ইতালি) বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রমী। তারা আমাদের দেশ থেকে নতুন করে লিগ্যাল চ্যানেলে লোক নিতে আগ্রহী। অন্যদেশের ভিসা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার যে প্রবণতা সেটাতে তারা নিরুৎসাহিত করেছে। আমরা তাদের বলেছি- এতদিন যারা এই লাইনে গেছে, তাদেরকেও যেন বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিজিবির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।