দেশবরেণ্য সাংবাদিক, দৈনিক নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক ও রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য আলমগীর মহিউদ্দিন ইন্তিকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই মেয়ের বাবা। তার বড় মেয়ে কানাডায় বসবাস করেন। চার বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান।

আলমগীর মহিউদ্দিন গত ৩০ মে বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে কয়েকদিন পর তাকে বাসায় নেয়া হয়। গত সপ্তাহে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি নির্বাক ও নিঃসাড় ছিলেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দেহে খনিজ অসমতা, সোডিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো এক বা একাধিক খনিজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি অথবা ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া তার ইউরিন, শ্বাসকষ্ট, ব্লাড প্রেসার ওঠানামাসহ নানাবিধ সমস্যা ছিল বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। প্রবীণ সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিন ১৯৪২ সালের ১ মার্চ নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মৃত্যুর পর রাজধানীর ফার্মগেটের মনিপুরি পাড়া কৃষি ল্যাবরেটরিজ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক নয়াদিগন্তের সাবেক সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। শোক জানানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এক শোকবার্তায় মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় উপদেষ্টা বলেন, আলমগীর মহিউদ্দিন সাহসিকতার সাথে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশায় অনেকের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তি। তার মৃত্যু দেশের গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে তার পরিবার-পরিজনদের মতো আমিও গভীরভাবে সমব্যাথী। সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক ও নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ছিলেন আপসহীন। সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বরাবরই তিনি ছিলেন নির্ভীক ও দ্বিধাহীন। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আলমগীর মহিউদ্দিন অবিসংবাদিত সিনিয়র সাংবাদিক। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর ইন্তিকালে জাতি একজন প্রথিতযশা সাংবাদিককে হারাল। তিনি তাঁর শোকাহত পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এসময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আলমগীর মহিউদ্দিনের রূহের মাগফিরাতের জন্য মহান রবের নিকট মোনাজাত করেন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়। দলের সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া ও সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান মরহুমের মাগফেরাত কামনা করেন।