চলতি বছরের ভোটার তালিকা হালনাগাদে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বাড়লেও নারীদের মাঝে এখনও অনীহা রয়ে গেছে যা দূর করতে নারী সংগঠনগুলোর সহায়তা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল রোববার ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই), ইউকেএইড এর অর্থায়নে বি-স্পেস প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ‘ইলেকশন ক্যাম্পেইন ফান্ডিং (উইমেন ক্যান্ডিডেট) অর্ডিনেন্স’ বিষয়ে পলিসি ডায়লগ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোটারযোগ্য হলেও অনেকে ভোটার হতে চান না, সাইনেস রয়েছে। এসব কুসংস্কারের বিষয়ে সচেতন করতে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। আবার অনেকে ছবিও তুলতে চান না। পাসপোর্ট পেতে ছবি তুলতে পারলে এনআইডি ও ভোটার তালিকার জন্য কেনো ছবি তুলতে পারবে না; এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। ভোটার তালিকায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির অনীহার বিষয়ে কিছু কুসংস্কার থাকার কথাও তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার জানান, ২০২০ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে নারী ভোটারের সংখ্যা তুলনামুলকভাবে পুরুষের চেয়ে কম হওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, তৃণমূলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনও কিছু সাইনেস কাজ করছে। ২০২০ সালে যে গ্যাপ ছিল ১১ লাখ, ২০২৫ সালের খসড়া তালিকায় এ গ্যাপ প্রায় ৩০ লাখ (কম পুরুষের চেয়ে)। তিনি আরও বলেন, বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। ধারণা করা যায়, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ভোটার তালিকাভুক্ত হননি, দেশে তো নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা এবং ভোটার তালিকায় বেশি না হলেও নারী-পুরুষ সমান সংখ্যক হওয়ার কথা।
এসব বিবেচনায় স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক প্রচারণার ফলে এবার হালনাগাদে বড় সংখ্যক নারী ভোটার পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবার প্রচারণার ফলে এই গ্যাপ ১২ লাখ কমে এসেছে। বর্তমানে এই গ্যাপ প্রায় ১৮ লাখ। আমরা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনারের মতে, আমাদের ধারণা, আরও বেশ কিছু সংখ্যক নারী আছেন যারা এখনও তালিকাভুক্ত হননি। এখানে যে সোশ্যাল ট্যাবুগুলো কাজ করছে বলে আমাদের মনে হয়েছেÑ ১৮ বছর বয়স হলেও বিয়ে না হওয়ার আগে অনেক জায়গায় মেয়েরা তালিকাভুক্ত হতে চান না; আবার অনেকে চান শ্বশুর বাড়ি গিয়ে ভোটার হবে। এসব সামাজিক কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে নারী সংগঠনগুলোর সহায়তা চান তিনি। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে নারী সমাজকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে পারেন আপনারা। আরেকটা বিষয়, সংখ্যাটা খুব বড় নয়, কিন্তু এটা একটা ভাইব ক্রিয়েট করে মাঝে মাঝে। কেউ কেউ বলেন, এমনকি ফেস পর্যন্ত দেখাতে চান না, ছবি তুলতে চান না এবং ভোটার হতে চান না।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যেহেতু এর সঙ্গে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা সম্পৃক্ত রয়েছে, কাউকে কোনো আঘাত না করে বলতে চাইÑ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব আছে তাদেরকে সঠিকভাবে সেনসেটাইজ করার। আমরা এটাও বলার চেষ্টা করছি, আপনি পাসপোর্ট দিয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছেন তখন ছবি ছাড়া পাসপোর্ট করছেন না; তাহলে এটা করবেন না কেন? আপনার নাগরিক অধিকার নেবেন না কেনো? তিনি জানান, পৃথিবীর অনেক দেশে ভোটদানকে নাগরিক অধিকারের চেয়ে বরং নাগরিক দায়িত্বে রূপান্তর করেছে। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে, কিন্তু ভাবনায় সেনসেটাইজ করতে হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে নির্বাচন হবে। এই লক্ষ্যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি চ্যালেঞ্জ। যেকোনো সময়ই চ্যালেঞ্জ। বর্তমানের চ্যালেঞ্জটা আমরা সবাই জানি। বর্তমানে আমরা বুঝতে পারি, দেয়ার উড বি এফর্টস টু ফয়েল দ্য ইলেকশন। দেয়ার উড বি এফর্টস টু আন্ডারমাইন দ্য ইলেকশন। দেয়ার উড বি এফর্টস টু আন্ডাইন দ্য ইলেকটরাল ইনটেগ্রিটি।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পলিসি ডায়ালগে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তরুণ এবং নাগরিক সমাজের অংশ নেন। সংলাপে প্রস্তাবিত Election Campaign Funding (Woman Candidates) Ordinance বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
একইসঙ্গে নারী প্রার্থীদের জন্য লিঙ্গ-সংবেদনশীল সরকারি তহবিল কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহজ আবেদন প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থারও প্রস্তাব করা হয়।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক মো. আব্দুল আলীম খসড়া অর্ডিন্যান্স উপস্থাপন এবং এর প্রত্যাশিত প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু উপদেষ্টা শারমীন মুর্শিদ প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে খসড়া অর্ডিন্যান্সকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই সংলাপ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার সংস্কারে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে এগিয়ে আসার অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি ক্যাথরিন সিসিল বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, সরকারি তহবিল নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। বর্তমানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট পুনর্গঠনের একটি যুগান্তকারী সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সরকারি তহবিল নারীদের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।