বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে শুকরানার নামায আদায় করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও এটিএম আজহারের শুভাকাংখীরা। গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সংগঠনের নেতাকর্মী ও মুসল্লীদের সাথে নিয়ে শোকরানা নামায আদায় করেন।
শোকরানা নামাযে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিমউদ্দীন সরকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডা. রেজাইল করিম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পুত্র আলী আহমাদ মাবরুর, জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামের পুত্র তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিল এবং জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণ। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় মসজিদে হাজির হয়ে সালাতুল জোহর জামায়াতে আদায় করার তাওফিক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। মসজিদের আদব হচ্ছে মসজিদের ভিতরে কোন শোরগোল হবে না। সবাই শান্ত থাকবেন এবং মনোযোগ দিয়ে বক্তব্য শুনবেন।
তিনি আরও বলেন, সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম আমরা মহান আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আমাদের একজন ভাই সুদীর্ঘ ১৪ বছর কারাগারের ভিতরে আছেন। মাথার উপরে মৃত্যুর পরওয়ানা। আল্লাহর এই বান্দা সব সময় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ছিলেন। তিনি কখনো আল্লাহর উপর থেকে তাওয়াক্কুল হারাননি। এই বয়সে তিনি চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তাকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে ও হাতে হ্যান্ডকাফ দিয়ে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা সত্ত্বেও তিনি সবসময় হাসিমুখে থাকেন। সব জুলুম নির্যাতন তিনি সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করেছেন। তিনি জানতেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ষোলআনা মিথ্যা। তার মত দ্বীনের একজন খাদেমকে মানবতার কল্যাণ থেকে বিরত রাখার মানবতাবিরোধী মিথ্যা অপরাধের দায়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের শীর্ষস্থানীয় ১১ জন দায়িত্বশীলের কয়েকজনকে ফাঁসি দিয়ে এবং কয়েকজনকে কারাগারে কষ্ট দিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মেহেরবাণী করে প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটি আল্লাহ তায়ালার কুদরত। এভাবে জুলুমের শিকার হয়ে জেলখানায় আমাদের নেতৃবৃন্দ, সহকর্মী, সাধারণ জনতা, আলেম-ওলামাসহ যাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে সকলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তাদের পরিবারের জন্যও দোয়া করি।
তিনি বলেন, এই মামলাগুলো যে মিথ্যা ছিলো আজকে মহান রব সেটাই প্রমাণ করলেন। এখানে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই, সমস্ত কৃতিত্ব মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। এ রায়কে কেন্দ্র করে আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবো না। এখানে যারা হাজির আছেন সকলের প্রতি এটাই আমার অনুরোধ। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। এ কাজ করতে গিয়ে আমাদের যেসব ভুলভ্রান্তি হয়েছে, আমরা তার জন্য আল্লাহর দরবারে পানাহ চাই। আমাদের এই ধৈর্যকে জান্নাতের উছিলা বানিয়ে দিন। যে ধরনের পরীক্ষাই আমাদের সামনে আসুক, সেই পরীক্ষায় যেন আমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।
তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে যারা আছেন তাদের অনুরোধ করি তাসবীহ ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ অভাবী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের এটা একটা বিশাল মাধ্যম। নিজ নিজ তাওফিক অনুযায়ী এতিম ও মিছকিনদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, ২৮ মে বুধবার দেশে ও প্রবাসের সকলকে অনুরোধ করবো সকলে বিশেষভাবে দোয়া করবেন। আপনারা দোয়া করবেন আমাদের ভাই যেন মুক্তি পেয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে শেফায়ে কামেলা দান করেন। দোয়া করবেন তিনি যেন ফিরে এসে তার রূহানি শক্তি দিয়ে মজবুতভাবে দ্বীনের কাজ করতে পারেন । আল্লাহ তায়ালা যেন তার দ্বারা এদেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করান। আমরা সবাই হাতে হাত রেখে ঈমানদার মুসলমান হিসেবে আমাদের এই ভাইয়ের জন্য যারা দোয়া করেছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই জুলাই বিপ্লবে আত্মদানকারীদের, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের; যাদের কারণে আজ বিচারটা সহজ হয়ে গেছে। আমরা তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা নিহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, আহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ক্ষমা করে দিন।
রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে শোকরানা নামায : জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদ- থেকে খালাস দেয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে খুশির খবর ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এটিএম আজহারকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে ২ রাকাত শোকরানা নামায আদায় করেন।
নামাযের পর সাংবাদিকদের কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ের পর আমাদের অনেক ভাই, মা বোন রোজা রেখেছেন। তারা আল্লাহর শুকরিয়া করছেন। যেকোনো ভালো খবরের পর আল্লাহর শুকরিয়া জানাতে শোকরানা নামায আদায় করতে হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ আমরা নামায আদায় করলাম।
এদিন সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীর আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে আজহারকে খালাসের রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা ছাড়াই তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছিল।