দেশে অন্তত তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাজনৈতিক দলগুলো সেই ফলাফল মেনে নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, গণতন্ত্র কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না; এর জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অপরিহার্য। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু সেটিই যথেষ্ট নয়। বার বার সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হলেও যারা পরাজিত হয়েছেন তারা সেটি মেনে নেননি। এর ফলে গণতন্ত্রে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া সেটি এগোয়নি।’

আলোচনায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনো কার্যকর ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে নির্বাচন হলেও সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা তৈরি হয় না। রাজনৈতিক দলগুলো পরাজয় স্বীকার না করার প্রবণতা এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার মানসিকতা গণতন্ত্রকে আরও দুর্বল করেছে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচন নয়; এখানে দরকার শক্তিশালী বিচার বিভাগ, কার্যকর সংসদ, জবাবদিহিমূলক নির্বাহী বিভাগ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম। এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী না করলে নির্বাচনের ফল টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে না।’ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো—রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্বলতা এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব।

আলোচনায় উপস্থিত অন্যান্য বক্তারাও একমত প্রকাশ করে বলেন, কেবলমাত্র নির্বাচন নয়, জনগণের আস্থা অর্জনের মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি। তারা জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সেতু তৈরি করা এবং নির্বাচনের পর জনগণের ভোটের রায় মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। গোলটেবিল আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদরা অংশ নেন।