ইবরাহীম খলিল : আজ ২১ জুলাই সোমবার। ২০২৪ সালের এইদিন ছিল রোববার। সব অফিস আদালত এদিন খোলা থাকার কথা থাকলেও স্বৈরাচার হাসিনার সরকার এদিনকে ছুটি ঘোষণা করে। সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবে বাসা থেকে বের না হন। উদ্দেশ্য দমন পীড়ন ও নির্যাতন করে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া। মনে করা হচ্ছিল সেদিন যারাই ঘর থেকে বের হবে তাদের আন্দোলনকারী আখ্যা দিয়ে গুলী করে আন্দোলন থামিয়ে দিবে সরকার এবং যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাদের ওপর চালানো হবে গুলী। এদিন পুলিশ র্যাবের গুলীতে সারি সারি লাশ পড়ে রাস্তায়। হাসপাতালগুলো ভোরে যায় আহতদের ভিড়। চিকিৎসকরা বলার সাহস পায়নি আাপনার সন্তান মারা গেছে। মিথ্যা স্যালাইন আর বেডে শুইয়ে রেখে শান্তনা দিতেন ডাক্তাররা। পুলিশের গুলীতে ঝাঝরা মাথার খুলি হাতে নিয়ে বাবা এসে ডাক্তারের কাছে মিনতি করতো স্যার আমার সন্তানের খুলিটা মাথায় ভরে দিন।
নিউরোলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডাক্তার মো. মাহফুজুর রহমানের ভাষায়, সেদিন দেখি পুলিশ এমনভাবে গুলী করেছে যে মগজ পর্যন্ত উড়ে গেছে। এম্বুলেন্সে করে রোগী আসছে আর মগজ টপ টপ করে পরছে। বাবা সন্তানের মগজ হাতে করে নিয়ে এসে বলছে স্যার মগজটা লাগিয়ে দেওয়া যাবে কি-না। সত্যিটা হলো বাবাতো বলবেই। আমরাতো দেখছি যখন গুলী করা হয়েছে তখনই মারা গেছে। আমরা সান্ত¡না দেওয়ার জন্য রোগীটাকে বেডে নিয়ে স্যালাইন দিলাম। কোন রকম করে একটু অক্সিজেন দিলাম। এটা ছিল সান্ত¡না। সান্ত¡না দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় এদিন বাসা বাড়িতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকে। সেইসাথে নানাভাবে চাপ তৈরি করতে থাকে শিক্ষার্থীদের ওপর। প্রস্তাব দেওয়া হয় আলোচনার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোভ দেখানো হয় কি চাই? কিন্তু শিক্ষার্থীরা রক্ত মারিয়ে কোন আলোচনায় যেতে রাজি হয়নি। শেখ হাসিনা এদিন নিরাপত্তাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে রাস্তাঘাট খালি করার নির্দেশ দেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মুখে এসব কথা-ই শোনা যায় বার বার। স্বৈরাচার হাসিনার পা চাটা কর্মকর্তারা তখন মরিয়া হয়ে ওঠে আন্দোলন দমন করার প্রচেষ্টায়।
২১ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন এবং কারফিউ বলবৎ ছিল। এদিন ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
২১ জুলাই দেশজুড়ে কারফিউয়ের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন সংঘর্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে ১৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন এবং নরসিংদীতে ৪, গাজীপুরে ২, নারায়ণগঞ্জে ১, সাভারে ১ ও চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকশ আন্দোলনকারী আহত হন, যাদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এছাড়া এদিন সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুসন্ধানী রিপোর্টের প্রতিবেদন বলছে, ২০ জুলাই পুলিশ র্যাব ও বিজিবি কিছু এলাকায় বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবরোধকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। এই অভিযানের সময় পুলিশ ও র্যাাব প্রাণঘাতি শক্তি ব্যবহার করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কমান্ডারদের যেকোন মূল্যে মহাসড়ক পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২১ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ঢাকা মহানগর কমিশনার হাবিবুর রহমান যাত্রাবাড়ি থানা পরিদর্শন করে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানদের এই বলে ব্রিফ করছিলেন যে, আমরা একজনকে গুলী করে মেরে ফেললে একজনই যায়। বাকীরা যায় না। এদিন আগের আহতদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর আসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। 'গুলী করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলী করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলী করা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালকে জানাচ্ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক সদস্য। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। ভিডিওতে পুলিশ সদস্যের নেমপ্লেটে নাম দেখা গেছে ইকবাল।
৪৩ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের সামনে ইকবাল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইল ফোন থেকে একটি ভিডিও দেখাচ্ছেন। ভিডিওতে পুলিশ কর্মকর্তার কথা শুনে বোঝা যায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলীতে হতাহতদের একটি ভিডিও আসাদুজ্জামানকে দেখানো হচ্ছে। ভিডিও ক্লিপটি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কাঁধের পেছন থেকে মোবাইল ফোন থেকে ধারণ করা হয়। আন্দোলনকারীদের পুলিশ গুলী করেও দমাতে পারছে না বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল। গুলী করার ভিডিও দেখাতে দেখাতে তিনি সাবেক মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'গুলী করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলী করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।' সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বিকারভাবে মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটি দেখেন। গুলী ও নিহতের দৃশ্য দেখে তার চেহারায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
২১ জুলাই আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ করার আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় কারফিউ অব্যাহত থাকে, সাধারণ ছুটির আওতায় স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২১শে জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কোটা মামলায় রায় প্রদান করে, সিভিল সার্ভিসের চাকরির বেশিরভাগ কোটা বিলুপ্ত করে এবং সিভিল সার্ভিসে ৯৩% শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ জন সমন্বয়কের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয় যাতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০০ জনেরও বেশি ছাত্র ও মানুষ নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র আদালতের আদেশ ব্যবহার করে সরকার হত্যার দায় এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পুলিশ কিছু মূল সংগঠককে তুলে নিয়ে গেছে এবং তাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ প্রকাশ করায় তিন বাহিনীর প্রধানরা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। কারফিউ চলতে থাকে এবং আরও সাতজন নিহত হয়।
১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সকাল ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করা হয়।
রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।
কোটা ইস্যুতে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে স্বাগত জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রায়ের পর এ প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, আপিল বিভাগের রায়কে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন তারা। এদিকে এ রায়ের পর শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে চার দফা দাবি পূরণে বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেন। চার দফা দাবির মধ্যে ছিল- কারফিউ তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এদিন আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকা-ের বিচারসহ আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান এবং ২২ জুলাই (সোমবার) গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জুলাই সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। এ অবস্থায় সারা দেশের পোশাক কারখানাসহ অন্য বড় শিল্প-কারখানাও বন্ধ রাখা হয়।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২২ জুলাই (সোমবার) কারফিউ বলবৎ থাকবে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্দোলনকালীদের দেখা মাত্র গুলী করার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতেও এদিন রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল ও মিরপুর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষ, গুলী, হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়। এসব মামলায় গত পাঁচ দিনে ঢাকায় প্রায় ২০০ জনসহ সারাদেশে অন্তত ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন বেশির ভাগ ছিলেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর সেতু ভবন ভাঙচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ৯ দফা দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২১ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণমাধ্যমকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০ জুলাই রাত ৮টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে হামলা চালান আন্দোলনকারীরা। পরদিন রোববার সকালে দ্বিতীয় দফায় জাহাঙ্গীরের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। তারা ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবনের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করেন। এদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসি’র সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
২১ জুলাই রাতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন।