জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ন্যাশনাল ইলেকশন সামনে হবে। আমাদের দাবি, ন্যাশনাল ইলেকশনের আগে লোকাল গভমেন্ট ইলেকশন করা। এটা এবারের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেই ফর্মে নির্দলীয় সরকারে আসবে তার অধীনে করা। এই সরকারে অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা অনেক বেশি ‘নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে জামায়াতের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াত নেতা ও বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমাদের আজকের ইস্যু ছিল, সেটা হল লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন। আমরা বারবার দাবি করেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কেয়ারটেকার সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ফর্মে সরকার থাকুক না কেন, নির্বাচনের আগে একটি সরকার আছে এবং সেই কিন্তু ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে এবং সব দল কিন্তু এভাবে একমত হয়েছে। এই সরকারে অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা অনেক বেশি ‘নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “ন্যাশনাল ইলেকশন সামনে হবে। আমাদের দাবি, ন্যাশনাল ইলেকশনের আগে লোকাল গভমেন্ট ইলেকশন করা। এটা এবারের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেই ফর্মে নির্দলীয় সরকারে আসবে তার অধীনে করা।”

এ নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আগেও বলেছি আমরা ইলেকশন কমিশন, সরকার সবকিছু আমরা অবজার্ভ করে চলেছি। সুতরাং এই জায়গায় আস্থা অনাস্থার বিষয়টা নিয়ে আমরা আবার মন্তব্য করছি না। আমরা অবজার্ভ করছি এবং এ পর্যন্ত যে জায়গায় সঠিক কাজ করেছে আমরা সেটা সঠিক বলব। কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলবো। যদি ব্যত্যয় ঘটে সে জায়গায় কথা বলতে হবে। এজন্য আমরা অবজার্ভ করছি। আমরা আশাবাদী উনারা ভবিষ্যতে জনআস্থাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবে।

বৈঠকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (পিআর) ভোটের বিষয়েও আলোচনা করেছে জামায়াত। এ প্রসসঙ্গে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পিআর পদ্ধতি হচ্ছে সুন্দর পদ্ধতি। ইসির কাছেও আমরা আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে এটা দাবি উত্থাপন করেছি। পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে সুষ্ঠু ভোট হয় না তা অতীতে দেখেছি। পিআর পদ্ধতিতে নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হয়। আমরা এক শতাংশ ভোটের হারে আসন বণ্টনের কথা বলেছি।

প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট ও অনলাইন পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে মতামতও তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে। ভোট দিতে পারে না। প্রবাসীরা যেভাবে বাংলাদেশকে বিদেশ উপস্থাপন করে, রেমিটেন্স পাঠায় তার চেয়ে বড় কথা তাদের ভোটাধিকার গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন বলেছে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তারা ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে পোস্টাল ভোটার, অনলাইন ভোটার পদ্ধতি যেগুলো আছে এগুলো ভোট গ্রহণের জন্য পদ্ধতি হিসেবে নিতে পারেন।

জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতীকসহ নিবন্ধন পুনর্বহাল করায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। অন্যায় অবিচার ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ন্যায়কে চাপিয়ে রাখা যায় না। বিগত সরকারের আমলে ‘অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়’। চরম অন্যায় করা হয়েছিল। আমাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। গতকালের (মঙ্গলবার) গেজেট আমাদের সেই অধিকার আদালতের আদেশের মাধ্যমে ফিরে এসেছে এবং দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। আদালতের আদেশের পর গেজেট প্রকাশে ‘গণাভ্যুত্থানের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়েছে’। আমরা এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। এখন আগামী নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে অংশ নেবে। জনগণের পছন্দের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার যে বাধা ছিল এটা উঠে গিয়েছে এবং এটা আরেকটা নতুন দৃষ্টান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, সংস্কার হবে তা যেন কাগজে না হয়। নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। আশা করি আগামীতে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। যে দাবিগুলোর কথা বললাম তা ইসি রিলেটেড। ঐকমত্য কমিশনের পাশাপাশি ইসিকেও জানালাম। পিআর পদ্ধতি আর লোকাল নির্বাচন, এখানে স্থানীয় ভোট সরকার বললে আয়োজন করে ইসি। তাই দুই জায়গায় সমন্বয় করতে হবে।