রাজধানীর মালিবাগের শম্পা জুয়েলারি নামে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দোকানমালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস জানান, বুধবার গভীর রাতে এই স্বর্ণালংকার চুরি হয়। এর মধ্যে ৪০০ ভরি দোকানের নিজস্ব স্বর্ণালংকার। আর ১০০ ভরি বন্ধকী স্বর্ণালংকার। বর্তমানে দেশের বাজারে, প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি।

ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারিনি পুলিশ। চুরির খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া সোনার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। এর সঙ্গে জড়িতদের পাকড়াও করতে র‌্যাব, পুলিশ, সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান অব্যহত রেখেছে। পুলিশের ধারনা দ্রুত এ ঘটনার রহস্য উম্মোচন যাতে হয় সে চেষ্টা চলছে।

এদিকে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করেছে পুলিশ। ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় রাত ৩টা ৭ মিনিট বোরকা পরা দু’জনকে দোকানের তালা ভাঙছে। দুজনই কালো রঙের বোরকা পরা। মুখ ঢাকা দুজনেরই। তাদের সঙ্গে আছে নানা সরঞ্জাম, যা দিয়ে তালা ভাঙা যায়। দুজনের কারও পায়ে জুতা নেই। তারা সতর্কতার সঙ্গে গুটিগুটি পায়ে করিডর ধরে এগিয়ে আসেন শম্পা জুয়েলার্সের দিকে। শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেট দেখিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু বলেন। মার্কেটের করিডরে আলো জ্বলছে। সব দোকান বন্ধ। শম্পা জুয়েলার্সের একপাশের কোনায় জায়গাটিতে এসে বোরকা পরা দুজনের সামনের জন থেমে যান। উঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন, কেউ আছে কি না। বোরকা পরা অন্যজনও পরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন। তারা শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। আশপাশে ঘোরেন।

একপর্যায়ে তারা করিডরের যেদিকে আলো কিছুটা কম, সেদিকে গিয়ে শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার কাজে লেগে পরেন। মাঝে একজন সেখানে থাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন। শম্পা জুয়েলার্সের অবস্থান রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের দ্বিতীয় তলায়। এই জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস। অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস বলেন, বুধবার রাত নয়টার দিকে তিনি ও তার কর্মচারীরা দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, তার সবকিছু শেষ। দোকানের তালা ভাঙা। দোকানে থাকা ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকার এবং ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা নেই। এ ছাড়া দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকাও নেই। সব চুরি হয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস।

বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের দোকানের ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকারের দাম ৮ কোটি টাকার বেশি বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা চুরি হওয়ার আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। চুরির খবর পেয়ে আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া সোনার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে তারা শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা করছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, শপিং মলের সামনে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বরত ছিলেন। রাতে মার্কেট বন্ধ করে দোকানমালিক-কর্মচারীরা বাসায় চলে যান। এরপরই চোর শপিং মলের পেছনের জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢোকে। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, শপিং মলের পেছনের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল ভাঙা। ধারণা করা হচ্ছে, এখান দিয়েই চোর শপিং মলের ভেতরে ঢোকে। পরে তারা দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্সের ফটক ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার তারা চুরি করে নিয়ে যায়। শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি গোলাম ফারুক। এর আগে ৫ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি জুয়েলারি দোকানের দেওয়া কেটে প্রায় ১২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ পৌনে ৩ লাখ টাকা চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে।