লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা মাহফুজ আলমের ওপর বারবার হামলার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ের শুরু থেকেই আমরা বারবার জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা ও বিভাজনকে উসকে না দেওয়ার আহবান জানিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিয়েই পরাজিত শক্তি বারবার এ ধরনের হামলার সাহস পাচ্ছে। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পারতাম।’ তারা অবিলম্বে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনারের উদ্যোগে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজ আলমকে অপদস্থ ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’

লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (সোয়াস) ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি সেমিনার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা করেছেন সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের ব্লুমসবারি এলাকায় সোয়াস ক্যাম্পাসে ওই সেমিনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন।

লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় সোয়াস ক্যাম্পাসের পেছনের রাস্তা দিয়ে হাইকমিশনের গাড়ি বের হলে গাড়ির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাইকমিশনের কালো রঙের বিএমডব্লিউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করেন তাদের কয়েকজন। কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁরা গাড়ির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন।

এ বিষয়ে গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন নাহিদ ইসলাম। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর লন্ডনে হামলার চেষ্টা হয়েছে। এর আগে আমেরিকায় হামলা ও অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার মাহফুজ আলমের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হামলা। কারণ, মাহফুজ আলমই টার্গেট। পরবর্তী ধাপে আমরা প্রত্যেকেই টার্গেট হব। আমরা জানি, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। গোপালগঞ্জে ফ্যাসিস্টদের নৃশংসতা আমরা দেখে আসছি।’

নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘মাহফুজ আলমের ওপর হামলার মৌন সম্মতি যারা তৈরি করছে, তারাও ভুগবে। ফ্যাসিবাদ বিভাজনের রাজনীতি করে। মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্ভুক্তি এবং দায় ও দরদের রাজনীতির কথা বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটে নাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাইছি, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার নাম করে প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করছে বিভিন্ন গ্রুপ, যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ফ্যাসিবাদকে ফিরায়ে আনবে। সময় প্রমাণ করবে, মাহফুজ আলমই সঠিক ছিল, যদি তত দিন উনি বেঁচে থাকার সুযোগ পান।’

নাহিদ ইসলাম আরও লেখেন, ‘মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনায় কোনোবারই অন্তর্বর্তী সরকার কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো শক্ত বার্তা দেয়নি। কোনো উপদেষ্টা বা প্রেস সচিব একটা মন্তব্যও কখনো করেনি। সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজ আলমকে অপদস্থ ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ তিনি লেখেন, ‘আমরা এগুলা মনে রাখছি। রাজনৈতিকভাবে এর জবাব দেওয়া হবে।’