রাজধানীর ফকিরাপুলে গোয়েন্দা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলীর ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পিকে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলীসহ গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি বলছে, গ্রেফতার এড়াতে সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে যশোরে এক বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন বাপ্পি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি। অভিযানের তথ্য জানতে পেরে গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই বাসার নারী ও শিশুকে হত্যার হুমকি দেন বাপ্পি। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় একাধিক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রোববার বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে যশোর জেলার ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন ও মো. কামরুল হাসান। অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, ৬টি ম্যাগাজিন ও দেড় শতাধিক গুলী উদ্ধার করা হয়। ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ জুন রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকার ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ আবদুর রহমান নামে একজনকে আটক করা হয়। এরপর ১৯ জুন রাত সোয়া ১২টার দিকে মাদকসহ আটক আবদুর রহমানের দেওয়া তথ্যে পল্টন থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার থামাতে নির্দেশনা দেন ডিবি সদস্যরা। এরপর প্রাইভেটকারে থাকা মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের তল্লাশি ও গ্রেফতারকালে শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পি ডিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলী করে পালিয়ে যান। এরপর তাকে গ্রেফতার করতে ঢাকা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গোপন সংবাদে জানা যায়, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাপ্পি যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান নেন। সেখানে নজরুলের জামাতা আবু খালিদ সাইফুল্লাহ, বোমা রিপন এবং মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাপ্পি বাসায় থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে দেন। বাসায় গ্যাস জমাট করে পুলিশকে হুমকি দেন যে, যদি তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয় তাহলে বাসায় থাকা শিশু ও নারীদের হত্যা করবেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় বাসার গ্যাস অপসারণ করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে তার দেওয়া তথ্যে গত শনিবার রাজধানীর ডেমরা থানার বসতবাড়ি আবাসিক এলাকায় বাপ্পির বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুটি বিদেশি পিস্তল, গুলী ভর্তি ৪টি ম্যাগাজিনসহ মোট ১৫১ রাউন্ড পিস্তলের গুলী উদ্ধার করা হয়। যুগ্ম কমিশনার নাসির আরও বলেন, বাপ্পির গ্রুপের সদস্য ২৫ জন। ২০১০ সাল থেকে বাপ্পি মাদক বিক্রি করে আসছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি তার গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে বাপ্পি গোয়েন্দা পুলিশকে বেশ কিছু ব্যক্তির নাম জানিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। মাদক-অস্ত্রের রুট সম্পর্কে আমরা কাজ করছি। বাপ্পির মাদক কারবার চক্রে অন্তত ২৫ জন সদস্য রয়েছেন। গত কোরবানির ঈদে তাদের অন্তত সাত লাখ টাকা সালামি দিয়েছেন বাপ্পি। এমন একটি তালিকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাদক কারবারি হয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলীর মজুতের বিষয় জানতে চাইলে ডিবির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাপ্পির কাছ থেকে ৪টি বিদেশি পিস্তল ও দেড় শতাধিক গুলী উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রগুলো বেশ দামি। অস্ত্র-গুলী মজুতের বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি মাদক কারবারের পাশাপাশি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেওয়াসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে আসছিলেন। এসব কাজে অস্ত্রগুলো মজুত করেন তিনি।