ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী হিসেবে দেশের রাজনীতিতে পরিচিত জাতীয় পার্র্টিতে নুতন করে নাটক শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ দলবলে পালিয়ে যাওয়ার পর অনেকটা গর্তে ঢুকে যাওয়া জাতীয় পাটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার নানা ফন্দি ফিকির করছে বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ। তারই অংশ হিসেবে কয়েকদিন ধরে জাতীয় পাটিতে অব্যহতির হিড়িক পড়েছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন এলেই জাপাতে বহিস্কার পাল্টা বহিস্কারের ঘটনা আগেও ঘটেছে।

আরেকটি সূত্র বলছে, জাপার নতুন এ নাটকের পেছনে রয়েছে নানা রহস্য। তা হলো পলাতক আওয়ামী লীগ জাপার কাঁধে সওয়ার হয়ে পুনবাসন হতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা যাতে একটা স্পেস পায় সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় পার্টির ব্যনারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্র্মীরা নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। সাবের চৌধূরী- মান্নানের কাঁধে সওয়ার হয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে এবার জাপার ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসিত হতে যাচ্ছে এমনটি জানা গেছে।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের একাধিক সিনিয়র নেতাকে অব্যাহতি দেন। এরপর থেকেই দলটির অভ্যন্তরে নেতৃত্ব সংকট ও বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের মহাসচিব নিয়োগ জি এম কাদের। জাপার সম্মেলন ঘিরে দলের নেতাদের দুপক্ষের চলা উত্তেজনার মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চুন্নুর পর আনিসুল ও রুহুল আমিন হাওলাদারকেও জাপা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময় সভায় সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর তিন দিন পর গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।এমতাবস্থা পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তিনজনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।”

তবে অব্যাহিতর সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি ও স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির অব্যাহতি পাওয়া সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, আমরা এখনো স্বপদে বহাল আছি। আমরা সবাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, তা স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তিনি নেতৃত্ব নির্বাচনে জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানান।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, জিএম কাদের রাতের অন্ধকারে জোর করে চেয়ারম্যান হন। এরশাদ (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) সাহেব তখন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। সে অবস্থায় জোর করে তার কাছ থেকে সই নেওয়া হয়েছিল। একটি গণতান্ত্রিক দলের নেতৃত্বে এমন অনিয়ম চলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আপনি (জিএম কাদের) যদি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে থাকেন, তাহলে সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিন। আমরা কাউন্সিল চাই। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হোক, সেটিই সবার জন্য গ্রহণযোগ্য।

জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, ‘আমরা চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়েছি। আপনার লাভ লেটার পেয়েছি। আমরা আপনাকে বহিষ্কার করিনি। আমরা আপনাকে ফেলে যেতে চাই না। আমরা দলকে শক্তিশালী করবো। আবার বৃহৎ ঐক্য করবো। আপনাকে আবারও বলবো, আসেন। আপনাকে আমরা সম্মান দেবো। কিন্তু দল ভাঙবে, দল ছোট হবে, এই রাজনীতি আমরা করবো না।’

রুহুল আমিন হাওলাদার দলের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন— কাদের সাহেব কেন এই কাজটি করলেন? তার কী হয়েছিল? তার অসুস্থতা আছে না কি, এটা পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে। কারণ, মানুষকে ভালোবেসে আপন করা, সহযোগিতা নেওয়া, সহযোগিতা করা, এটা কঠিন কাজ। আর এখানে ইজি গো-ইন, আপনি আমাদের চিঠি দিলেন। আমরা চিঠি পেয়েছি। একজন সুস্থ রাজনীতিবিদ এই ধরনের কাজ করতে পারে না।

এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার আরও বলেন, “আমাদের ঘামে, আমাদের পরিশ্রমে, আমাদের টাকায়, আমাদের সারা দেশের মানুষের কাছে যাওয়া, আমাদের আবেদনে মানুষ সাড়া দিয়েছে। আর আজকে আমাদের দল থেকে অব্যাহতি দিলেন। সারা দেশের মানুষ আজ অবাক। প্রাথমিক সদস্য পর্যন্ত আপনি রাখেননি। আপনি কোন সাল থেকে রাজনীতি করেছেন আমার জিজ্ঞাসা। এটা কী রাজনৈতিক আচরণ?”

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। একদম ধ্বংসের কিনারায়। সেখান থেকে জাতীয় পার্টিকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, কী ভাবে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, রাজনীতিতে আবার আমাদের অবস্থান ফিরে পেতে পারি, সেই জন্য আজ এই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে।”

“আনিস ভাই দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান, কী দেখছি, চট চট করে সবাইকে বাহির করে উনি (জিএম কাদের) একা থাকবেন। একা একটা কোম্পানি করা যায়, বউয়ের সাথে সংসার করা যায়, রাজনীতি করা যায় না। সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক উনি (জিএম কাদের) আমাদের দলের চেয়ারম্যান। একটা মাথা খারাপ লোক, অসুস্থ লোক, মেন্টালি সিক। তার সাথে রাজনীতি করা যায় না।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “উনি (জিএম কাদের) যে কী করেন নিজেই বুঝতে পারছেন না। তিনি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নিজেই জানেন না। উনার মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কি না ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা পার্টি করি। জনাব কাদের আপনি আমাদের দল ও পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন, ওকে। কিন্তু প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন, যাতে আগামী কাউন্সিলে কোনো চ্যালেঞ্জ না হয়। আপনি যাতে এক দফা ভাবে নেতা নির্বাচন হন।”

তিনি আরও বলেন, আমরা জাতীয় পার্টি ছাড়বো না। জাতীয় পার্টি করবো। আপনার যে কাউন্সিল, সেই কাউন্সিলে যাবো। সেই কাউন্সিলে আমরা অংশগ্রহণ করব। আপনি যেতে না দিলেও আমরা যাবো। জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে আমরা দেবো না, আপনি যতই চেষ্টাই করুন। আপনার ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দলকে ভাঙার প্রক্রিয়া করবেন, এটা আমরা হতে দেবো না। কারণ, আপনার চেয়ে এই দলে আমাদের অবদান বেশি। আমাদের দরদ বেশি। দলকে কোনো অবস্থাতেই ভাঙতে দেবো না।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেছেন, ‘ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে সাবের-মান্নানদের কাঁধে সওয়ার হয়ে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই প্রজেক্ট ভ-ুল হওয়ায় এখন পাটোয়ারী শেষ ভরসা।’

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে যাচ্ছে। আপা এখন জাপায় ভর করেছে। জাপাতে যে অন্তঃকোন্দল দেখতে পাচ্ছেন, এটা স্রেফ মেকি। ভারতের নতুন ছক অনুযায়ী জাতীয় পার্টি সংস্কারের নামে একটা ধোঁকাবাজি চলছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জাপাকে সুযোগ দিচ্ছে অভিযোগ করে রাশেদ খান বলেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে যেহেতু আপা ও জাপা ভক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপা সরাসরি ফিরে আসতে না পারলেও জাপার ঘাড়ে চড়ে আপাকে ফেরানোর বিষয়ে তারা ইতিবাচক। আর তারই অংশ হিসেবে ভারত ও আপার নতুন খেলোয়াড় শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মাঠে নামিয়েছে। যেখানে এসব পাটোয়ারীকে জেলে থাকার কথা। সেখানে তারা হতে যাচ্ছে আপা রক্ষার মূল খেলোয়াড়।’