বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উদযাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন থেকে তেলওয়াত করা হয়। এরপর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে গিয়ে শহীদদের জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজনও রাখা হয়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস স্বাগত বক্তব্য দেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠতম শান্তিরক্ষী হিসেবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেওয়ার পর বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এর আগে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমান বন্দর মসজিদ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে শান্তিরক্ষী দৌড়/র্যালি হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এটি উদ্বোধন করেন।
দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী পৃথক বাণী দিয়েছেন। সেইসঙ্গে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে বিশেষ জার্নাল ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।
খুলনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৫ উদযাপন
খুলনা, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে খুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৫’ উদযাপিত হয়। দিবসটি সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিশেষ র্যালি ও বানৌজা তিতুমীরস্থ ফেয়ারওয়ে মাল্টিপারপাস হলে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০২ সাল হতে প্রতিবছর ২৯ মে দিবসটি পালন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের স্থানীয় প্রতিনিধি, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং বিএনসিসি ও নৌ স্কাউটের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটি পালনের লক্ষ্যে সকাল ৭.৩৫ টায় শিববাড়ি মোড় হতে বিশেষ র্যালি শুরু হয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে বানৌজা তিতুমীরস্থ ফেয়ারওয়ে মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন অবমুক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত এবং শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী সদস্যদের স¥রণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশের সর্বমোট ২,০০,৫৫৮ জন শান্তিরক্ষী সদস্য বিশ্বের ৪৩ টি দেশে এ পর্যন্ত ৬৩ টি মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার এই মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের ১৬৮ জন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে এবং জাতিসংঘের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ভাবমূর্তি বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পরিবর্তিত বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ ভবিষ্যতেও বিচক্ষণতা, পেশাদারিত্ব এবং সাহসিকতার মাধ্যমে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে সর্বদা কাজ করে যাবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।