বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বহুল প্রতিক্ষীত বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি। সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই এটি প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পকে স্থানীয় জনগণ, বিশেষ করে ফেনীর বাসিন্দারা তাদের এলাকার কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন। তারা এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো কৃষিতে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। গত ২২ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ অনুমোদন করা হয়। সভায় ভূমি সচিব, কৃষি সচিব, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়।

জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ফেনীর সোনাগাজীতে ৫৩৫.৩৭ একর আয়তনের বীজ বর্ধন খামার স্থাপন করা হবে। এই খামারে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে উদ্ভাবিত মৌল শ্রেণীর বীজ থেকে উন্নতমানের ভিত্তি শ্রেণীর বীজ উৎপাদিত হবে। এখানে ধান, আলু, সরিষা সহ অন্যান্য ডাল ও তৈল বীজ, ভুট্টা বীজ ইত্যাদি ফসলের বীজ উৎপাদন করা হবে এবং পরবর্তীতে কৃষক পর্যায়ে এই বীজ মাল্টিপ্লাই করে প্রত্যায়িত শ্রেণীর বীজ (ঈবৎঃরভরবফ ংববফ) উৎপাদন করা হবে।

বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বিএডিসি সরবরাহ করে প্রায় ১ লক্ষ ৫৮ হাজারমেট্রিক টন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ২৫ হাজার টন এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় ২ লাখ টন বীজ সরবরাহ করা হয়।

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, এই খামারে ভিত্তি শ্রেণীর উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করা হবে। শুধুমাত্র উন্নতমানের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের ফলন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষি অগ্রযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি শুধু কৃষি নয়, বরং স্থানীয় মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।