# আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সংহতি প্রকাশ
অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ ৭ দফা দাবিতে সপ্তম দিনের মতো দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দেশজুড়ে গ্রাহক সেবা চালু রেখে এ কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। গতকার মঙ্গলবার শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে জামায়াত, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা বলছেন, সাতদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও এখন পর্যন্ত সরকারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এর আগে সোমবার গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারা দেশে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম। সে সময় বলা হয়, আমাদের বিরোধ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সঙ্গে, যা সমাধানে আমরা এ কর্মসূচি পালনে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) দ্বন্দ্ব যেন বেড়েই চলেছে । কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা সপ্তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কয়েক হাজার কর্মী।এ অবস্থায় বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতের চলমান এ দ্বন্দ্বের অবসান কোথায়, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে।
আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা বলছেন, প্রথমে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে । এতে ধীরে ধীরে তাদের দাবি দুই দফা থেকে সাত দফায় রূপ নিয়েছে। তারা এখন সাত দফা দাবিতে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
যে ৭ দাবিতে আন্দোলন
১. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী, অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ। ২. এক ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা দেশের অন্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন। ৩. মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিক এবং পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ। ৪. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল। ৫. গ্রাহক সেবার স্বার্থে লাইনক্রুসহ সব হয়রানি ও শাস্তিমূলক বদলি আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন। ৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা/শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়নের জন্য অতিদ্রুত জনবলের ঘাটতি পূরণ করা। ৭. পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত করা।
চার হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা!
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন (বাপবিএ) জানিয়েছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিনা নোটিশে ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে। পাশাপাশি মামলা, রিমান্ড, গ্রেফতার, বরখাস্ত, দূরবর্তী স্থানে বদলির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এরমধ্যে হয়রানিমূলক বদলির শিকার চার হাজার ১১৮ জন।তাদের মধ্যে লাইনক্রু প্রায় ৬৭৩ জন, জুনিয়র প্রকৌশলী ৫৮৯ জন, ইনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর (ইসি) ২৯০ জন, পাওয়ার ইউজ কো-অর্ডিনেটর (পিউসি) ১২১ জন, বিলিং সুপারভাইজর ৩০৮ জন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক ৫৮০ জন, উপমহাব্যবস্থাপক ১৭৯ জন, সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক ৩৬ জন ও অন্যান্য রয়েছেন ৯০৭ জন। সবশেষ ৪৩৫ জন লাইন টেকনিশিয়ানকে বদলি করা হয়।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ কর্মকর্তাকে আসামি করে ঢাকার খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আরশাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। গত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের মদতে বিদ্যুৎ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
এর দুদিন পর ১৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে গ্রাহক ভোগান্তি তৈরির পাশাপাশি রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ১৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় । মামলায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ।
পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আদায়ে অনড়। ২৭ মে সারাদেশে কর্মবিরতি চলছে। এখন পর্যন্ত সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা চাচ্ছি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে । আমরা প্রধান উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’