যথাযথ নিয়ম না মেনে নিয়োগ দেয়া দেশের সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের এমডি হিসেবে ডঃ জাহেদুল হাছানকে আবার এমডি করার চেষ্টা চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নতুন করে ড: জাহেদুলের নিয়োগ প্রক্রিয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, বিগত সময়ে নিয়ম বর্হিবহিভুতভাবে নিয়োগ পাওয়া ড: জাহেদুল হাছানের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম, চরম অব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ডঃ জাহেদুল হাছান ৩১ মে ২০২৫ থেকে অবসর উত্তর ছুটিতে গেছেন। তার পিআরএল মঞ্জুর হয় গত ২৭ মে কিন্তু ২৮ মে অবসর উত্তর ছুটি বাতিল না করেই তাকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (ঘচঈইখ)-এর অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৯ এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সার্ভিস বিধিমালা, ১৯৮৫ এর ধারা ৪৬ মোতাবেক, পিআরএল অবস্থায় কোনো সরকারী কর্মকর্তাকে এমন নিয়োগ প্রদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন আবশ্যক। কিন্তু এই নিয়োগে উক্ত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি, যা স্পষ্টভাবে প্রযোজ্য আইন ও বিধিমালার লঙ্ঘন এবং যা একই সাথে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত বহন করছে।
সম্প্রতি সরকারের আরেক অডিট মেমোতে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১০ বছর পরও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)কে এখনো কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্টো উক্ত কোম্পানির সমস্যাগুলোর সমাধান যারা চাচ্ছেন, তাঁদের উপর দমন পীড়নমূলক শোকজ, প্রকল্প প্রবেশে বাধা, প্রকল্প থেকে অব্যহতি, সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভিন্ন আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে হয়রানি করছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। এ যেন ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া ডঃ জাহেদুল হাছানের অন্য এক আয়না ঘর। এইগুলো সবই রূপপুরের অপারেটিং অর্গানাইজেশন-এনপিসিবিএল কে অকার্যকর করে রেখে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দীর্ঘদিন বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনা করার পায়তারার অংশ।
ডঃ মোঃ জাহেদুল হাছান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অন্যতম প্রধান নেগোশিয়েটর ছিলেন। গত ১৭ই আগস্ট ২০২৪ গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে যে, রূপপুর পারমনাবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি হয় যা পরবর্তীতে দেশের সকল মিডিয়াতেও প্রচারিত হয়। এ বিষয়ে দুদকসহ অন্যান্য সংস্থার অনুসন্ধান চলমান। রূপপুর প্রকল্পের বাজেট ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার যেই অভিযোগ রয়েছে, তার মূল নায়ক ড. মোঃ জাহেদুল হাছান। তিনি রাশিয়ার সাথে সকল ধরনের চুক্তির অন্যতম কৌশলী ছিলেন। বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় কর্তৃক অডিট মেমোতে এ সম্পর্কে তথ্য উঠে এসেছে। অডিট মেমোতে উঠে আসছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি ১৩.১৯ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণের স্বপক্ষে হওয়ার কোন জাস্টিফিকেশন পেপার পাওয়া যায়নি। রুপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়ায় নির্মিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ জাহেদুল হাছান এর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে।
অন্য আরো দুটি অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, ডঃ মোঃ জাহেদুল হাসান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় চার কোটি টাকা অর্থলোপাট করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে. ড. জাহেদ একদিনে ১৮৬টি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার মতো অপ্রয়োজনীয় রেকর্ড উনি সৃষ্টি করেছেন। সরকারের শত কোটি টাকায় রাশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষিত প্লান্টের একমাত্র প্রধান প্রকৌশলীসহ ১৮জন প্রকৌশলী ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে উনি বিনা কারণে টার্মিনেট করেই ক্ষান্ত হননি বরং আরো ১১জন প্রশিক্ষিত অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করেন।