পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামতের বিষয়ে সংলাপ আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সাধারণ মানুষেরও মতামত নেওয়া হবে, এসব সুপারিশের বিষয়ে। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকের এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে ৩৮ রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চেয়েছিল। আজ পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ২৯ দল মতামত জানিয়েছে। মতামত দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে গত ২০ মার্চ থেকে প্রথম দফার সংলাপ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক হবে কমিশনের।

আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের সুপারিশের সব শ্রেণি-পেশার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জরিপ করা হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও মতামত জানতে পারবে আগ্রহীরা। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু এর বাইরেও অনেক মানুষ আছেন। তাদের মতামত নিতে চাই। কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টা হচ্ছে সবার অংশগ্রহণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।

১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ মাস। কমিশন নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করবে জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আশা করি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে। যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। তা নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে। কমিশনের লক্ষ্য জুলাইয়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা।

এদিকে বৈঠকের পর এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, তাদের দলের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত থাকলেও, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় তা দূর হয়েছে। নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার চায় এবি পার্টি। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে বিদ্যমান সংবিধান মেনেই সংস্কার সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, গ্রহণযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বার্থে এবি পার্টি নমনীয় অবস্থানে থাকবে। সংবিধানের মূলনীতি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়সসীমা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ যেসব বিষয়ে ভিন্নমত ছিল তা নিয়ে অবস্থান বদল করেছে। তবে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। ঐকমত্য কমিশন জেলা এবং সিটি করপোরেশনগুলোকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেছে। এবি পার্টি আগে ভিন্নমত জানালেও বৈঠকে এতে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ যদি কোনো পদ-পদবি হবে না- এ শর্তে এবি পার্টি একমত জানিয়েছে। এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অংশ নেন। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির ১৩ সদস্য ছিলেন।

এবি পার্টি ১৬৬ সুপারিশের ১০৮টিতে একমত, ২৬টিতে আংশিক একমত এবং ৩২টিতে ভিন্নমত জানিয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিরোধী ছিল। সরাসরি ভোটের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছিল। প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলে প্রধান বিচারপতিকে সদস্য করার বিরোধী ছিল। এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আগের মতে ভিন্নমত রয়েছে। এতে একমত হবে না এবি পার্টি।

কমিশন সংসদের ১০ শতাংশ আসনে তরুণদের প্রার্থী করার সুপারিশ করেছে। কমিশনের বরাতে সানী আব্দুল হক বলেন, তরুণের সংজ্ঞা ঐকমত্যে নির্ধারিত হবে।