জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যরা তাদের শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেন। একইসঙ্গে তাদের মঞ্চটিও অপসারণ করা হয়। এসময় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের একটি দল পিজি হাসপাতাল থেকে অবস্থানকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশকেও ছত্রভঙ্গ করতে বেশ তৎপর দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ধারী একটি পক্ষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। শুক্রবার বিকেলে জুলাই যোদ্ধাদের আরেকটি পক্ষ অবরোধের বিরোধিতা করলে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে সংঘাত এড়াতে পুলিশ উভয়পক্ষকে শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম শাহবাগ মোড় অবরোধ করে।

অবরোধের সময় তারা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে’সহ নানা স্লোগান দেয়। অবরোধে শাহবাগ মোড় ও এর আশপাশের সব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে আজ সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যরা তাদের শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেন। আন্দোলকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তা কেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

অবরোধ চলাকালে রবিউল নামে এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুদিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে। শাহবাগ অবরোধকারীদের একজন মো. ইয়াছিন বলেন, আমার পিঠে পুলিশ পিটিয়েছে। পিজি হাসপাতাল থেকে একদল এসে আমাদের ওপর হামলা করে আমাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আহত থাকলেও অধিকাংশ বাইরের, যারা আমাদের আন্দোলনকে সফল হতে দিতে চায় না।

আব্দুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, আমরা ফুটপাথ ছেড়ে দিয়েছি। সন্ধ্যার পর রাস্তা ছেড়ে দিয়ে শুধু অবস্থান কার্যক্রম চালিয়ে যেতাম। কিন্তু কিছু না বলে তারা হামলা করে আমাদের ওপর। আমাদের জুলাই আহত এক বোনের হাত ভেঙে গেছে লাঠির আঘাতে। আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ বলেন, আমাদের ওপর পুলিশ আর আহতদের আরেকটি দল একসঙ্গে হামলা করেছে। আমাদের দুইজন এখন হাসপাতালে ভর্তি। অনেকে আহত। আমরা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হচ্ছি এখন। পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, আন্দোলনকারীরা তিনদিকের রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে জুলাইয়ের আহত যারা চিকিৎসা নিচ্ছে তারা জনভোগান্তির কথা বলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এখানে পুলিশ কোনো অ্যাকশন নেয়নি।