সেকেন্ড, মিনিট, দিন, মাস গুণে গুণে বছর পার করে বাংলাদেশের আকাশে আজ সূর্য্য উদিত হয়ে যে দিনের সূচনা করলো তা নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এর কারণ বহুবিধ। জুলাই আন্দোলনের সফলতা, স্বৈরাচার হাসিনার পলায়ন, ১৭ বছরের দুঃশাসনের অবসান কিংবা নতুন বাংলাদেশ গঠনের হাতছানি। এবং, অথবা, কিংবা, যদি ছাড়া বলতে গেলে পার হওয়া বছরের প্রতিটি ক্ষণ এবং মুহূর্ত ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনার। বছর শেষে একথা মনে করিয়ে দিল ... আজকের এই দিনটি প্রতিবেশী দেশের আধিপত্যবাদ এবং স্বৈরাচার রুখে দিয়ে নিগুঢ় অন্ধকার কালিমার রাত্রীকে বিদায় জানিয়ে নতুন ভোরকে স্বাগত জানানোর। সীমাহীন আকাক্সক্ষাকে আলিঙ্গণ করার এবং অফুরস্ত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলার। প্রতিটি প্রহরকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি মানুষকে এক পতাকা তলে আবদ্ধ করার।

গেল বছরটাকে নানাভাবেই বিচার বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যার যার চিন্তার নিরীখে চিন্তকেরা তা-ই করবেন। পার হওয়া সময়টুকু মূল্যায়নের ফ্রেমে বন্দী করলে কাজের সময় অনেক। আবার কতটুকুই বা বিচার্য্য বিষয় হলো গত হওয়া সময়ের কতটুকু কাজে লেগেছে, কতটুকু লাগতে পারতো। তার শেষ পাশে প্রশ্নের জ্যোতি চিহ্ন লাগানো যাবে অনায়াসেই। আর এই দিনে জাতি কতদূর এগিয়েছে, কতটুকু এগুতে পারতো তা-ও বলার আপেক্ষিকতা থেকেই যায়। বছর শেষে এবং প্রথম দিনে দাঁড়িয়ে মোটা দাগে যা বলা যায় তা হলো ... সবার চোখে বিস্ময় রেখে স্বৈরাচারের উঁকি-ঝুঁকি এবং হুমকি মোকাবেলা করে যা দৃশ্যমান হয়েছে তা-ই বা কম কিসে ?

উল্লেখিত কথার ওপর প্রশ্ন রেখে এভাবে যদি বলা হয় ... ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখ আন্দোলনের পাদপ্রদীপ জ¦ালিয়ে রংপুরের মাটির গর্ব আবু সাঈদ পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে শাহাদাতের নাজরানা দেওয়ার পর সারাদেশ জুড়ে যে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে জুলাই আন্দোলন যে গতি পায় এবং সারাদেশে আন্দোলন যেভাবে ছড়িয়ে পরে, যেভাবে মানুষ সাহসী হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়, সেই আন্দোলনের গতির স্্েরাতে যেভাবে জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য বে-শরম বেলাজের মতো স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যায়; সেই গতিতে কি স্বৈরাচারের দোসররা পালিয়েছে? দেশের শাসন ব্যবস্থা থেকে অনাচার ঘুষ দুর্নীতি কি সেই গতিতে পালিয়েছে? উত্তরে বলতে হবে ‘না’। অথচ এটাই হওয়ার কথা ছিল। তাই না। উত্তর হওয়ার কথা ছিল ‘হ্যাঁ’। প্রশ্ন হলো লাজ শরমের মাথা খেয়ে হাসিনার পলায়নের পর স্বাধীন দেশে আবার টেম্পু স্ট্যান্ড দখল হয়ে গেলো। চাঁদাবাজের চেয়ার অদলবদল হলো। টেম্পু স্ট্যান্ডের দখল একহাত থেকে আরেক হাতে গেল। জুলুমবাজি এক দলের হাত থেকে আরেক দলের হাতে গেল। ঠিক তারা জনগণের ওপর জুলুমবাজি চালিয়ে যেতে লাগলো। জুলাই বিপ্লবের বছর শেষে এসব কথা মনে করিয়ে দেওয়ার একটা অর্থ নিশ্চয় আছে। তা হলো যুদ্ধ শেষ হয়নি। যা এদেশের সচেতন মানুষের কথা। বিষয়ে যদি প্রশ্নের উত্তর নেওয়া হয় তাহলে কেউ বলবে ‘হ্যা’ আবার কেউ বলবে ‘না’।

এই হ্যাঁ আর না’র মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক বছরের মূল্যায়ন করে বলতে হলে যা বলা দরকার তা হলোÑ ‘নতুন বাংলাদেশ শুধু সম্ভাবনা নয়Ñএটি সময়ের দাবি। সেই দাবির আলোকে আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি এমন প্রশ্ন সামনে এনে আগামিতে কিভাবে পথ চলা দরকার সেই রূপরেখা প্রবর্তন করা দরকার বৈকি। অবশ্য এবারের আন্দোলনের অগ্রনায়করা বলছেন, যেহেতু এবার তরুণরা জেগে উঠেছে, জনগণ আর পেছনে ফিরবে না। তারা বলছেন, বাংলা ব্লকেড’র প্রবক্তারা, কমপ্লিট শাট ডাউন’র মাস্টার মাইন্ড এবং ফেসবুক কালো থেকে লাল করার উদ্যোক্তারা, রাতারাতি ৯ দফা থেকে ১ দফায় চলে আসার কারিগররা পিছু হটবে না। হটতে পারে না। হাজার হাজার শহীদের উত্তরসূরীরা পেছন ফিরে তাকাতে পারে না। তাকাবে না। হতাহতদের রক্তের সাথে তারা বেঈমানি করতে পারে না। জুলাই বিপ্লবে রক্তের উত্তরসূরীরা এমন বাংলাদেশ চায়, যেখানে নাগরিকের মর্যাদা, অধিকার ও স্বপ্ন রক্ষিত থাকবে পুরোটাই। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, কিংবা মতাদর্শ নির্বিশেষে মর্যাদা থাকবে সমানে সমান। থাকবে মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন। আইন হবে সকলের জন্য সমান। তারা চায় এমন অর্থনীতি, যেখানে ধনিক শ্রেণির একচেটিয়া ক্ষমতা নয়Ñগ্রামের কৃষক, শ্রমিক, নারী ও যুবকের জন্য হবে স্বনির্ভরতা ও সম্ভাবনার পথ। এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যা কেবল পরীক্ষায় পাস করানো নয়Ñচিন্তা, মানবিকতা ও নৈতিকতাকে উৎসাহিত করবে। কারণ ২৪’র বিপ্লব প্রমাণ করেছে, তরুণরাই জাতির চালিকাশক্তি। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ-প্রতিবাদ ইতিহাস গড়েছে। তরুণেরা চায় আগামির নেতৃত্ব গড়ে উঠুক প্রতিষ্ঠান এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এর মধ্য দিয়ে দেশবাসীর ভালোবাসার আস্থায় পরিণত হউক তরুণেরা।

নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও মাহফুজ আলম এস এম ফরহাদ, মোহি উদ্দিন খান, মনজুরুল ইসলাম, সিবগাতুল্লাহ ও রিফাতরা দেশবাসীর কাছে যে স্বপ্নের সারথী হয়েছেন; তাদের সাধনায় সৃষ্টি হওয়ার পথ যেন থাকে পাপ-পংকিলতামূক্ত। সম্ভবনার স্রোত ছুটে চলুক বাংলাদেশকে নতুন থেকে নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নেওয়ার পথে। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে স্বৈরাচারের দোসরেরা ঘাপটি মেরে থাকতে পারবে না। তাদের কথায় আর দেশ চলতে পারে না। সময়ের দাবি হলো বৈষম্যহীন, কল্যাণময়, আইনের শাসন, মানবিক মর্যাদা ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রত্যাশা করতেই পারে এদেশের জুলাই আন্দোলনের অংশীজনেরা। তারা শহীদ আবু সাঈদের বাবার মতো মীর মু্েগ্ধর ভাইরের মতো দাবি করতেই পারে ৬১৩২০০ মিনিটের এক বছরে কি পেলাম ? কি পেতে পারতাম ? কি পাওয়া উচিত ছিল ? এর শতভাগ জবাব দেওয়া সম্ভব না, দেওয়া যাবেও না। তাহলে ?

কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ কি তাহলে অধরা ? না এই দেশকে গড়ার বহু সময় সামনে পড়ে আছে। কেবল কাজে লাগাতে হবে। কাজে লাগানো যেতে পারে। তার আগে বাদ দিতে হবে পুরনো দুর্গন্ধময় রীতি নীতি। নিয়ম কানুন। যেমনটা কবি নজরুল বলেছেন ‘ঐ নতুনের কেতন উড়ে’। একথা বলার পরও প্রশ্ন আসবে, আসা স্বাভাবিক এক বছর সময়ের মধ্যে কোথায় কতটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন হলো, বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় সেবা নিতে গিয়ে মানুষের ঘুষ ও হয়রানির পরিমাণ কতটা কমেছে ? তারচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঘুষ ও দুর্নীতি কতটা বেড়েছে ?

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বলেছেন আরেকটি যুদ্ধ লাগবে সেটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেটা করতেই হবে। তিনি আরও বলেন ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’। গত ২৬ জুলাই ২০২৫ ইং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে একজন ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে বলেন, 'আগে ঘুষ দিতে হতো এক লাখ টাকা, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা। তিনি বলেন, দেশের কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশেও কোনো পরিবর্তন হয়নি।

একজন শীর্ষ রাজনীতিকের এই বাক্য যদি সত্য হয় তাহলে নতুন করে প্রশ্ন জাগবে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের। রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রতিটি জুলাই আহত যোদ্ধার। তাদের রক্তের ঋণ কি জাতি এভাবেই শোধ করবে ? আর এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বৈরাচার ফিরবে শিগগিরই সেকথাও বলেন কেউ কেউ। হাজারো মানুষের প্রশ্ন স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়েছেন এক বছর হলো। কথা হলো হাসিনা কি এই দেশে একাই স্বৈরাচার কায়েম করেছিলেন ? উত্তর হচ্ছে ‘না’। হাসিনা তার রাজত্ব ঠিক রাখার জন্য দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেক্টরে দোসর পয়দা করেছিলো। সেই দোসরেরা হাসিনাকে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে জীবনপণ সহায়তা দিয়ে গেছে। এদের উৎসাহে স্বৈরাচার হাসিনা তার স্বৈরতন্ত্র আরও উর্ধ্বে নিয়ে গেছে। তার স্বৈরতন্ত্রকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। তার এই স্বৈরতন্ত্রের মসনদ টিকিয়ে রাখতে হত্যা গুম খুন রক্তের হলি খেলাকে কিছুই মনে করতেন না। পালিয়ে যাওয়ার পরও তার দোসররা শত শত মানুষের প্রাণ সংহার করেছে। হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে পঙ্গু করে দিয়ে বহাল তবিয়তে বসে আছে। তাদের কি হবে ? সেই প্রশ্ন বছর ঘুরে আসছে মানুষের মনে।

এবার আসি প্রত্যাশার কথায়। বছর পার হলেও একটি বৈষম্যমুক্ত, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি। হাতেগোনা দু চারটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাদ দিলে অধিকাংশ সিদ্ধান্তই জনকল্যানেই নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। স্বৈরাচারের দোসরদের স্বপদে বসিয়ে রেখে যেটুকু করতে পেরেছে ড. ইউনূস সরকার তা-ই বা কম কিসে ? বলা হচ্ছে যেখানে অধিকাংশ কর্মকর্তার মধ্যেই নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে তাদের দিয়ে দিয়ে ইতিবাচক কাজ করানোর মতো কঠিন কাজটি করতে পেরেছে বর্তমান সরকার।

জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর এক বছরে বাংলাদেশ যে পথে যাওয়ার কথা সেদিকে যায়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়নি। জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভুত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, নৈর্ব্যক্তিক, মানবিক ও গণমূখী রাষ্ট্র গঠন হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। একটি সত্যিকারের জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঔপনিবেশিক আইনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুগোপযুগী করা হয়নি।

প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে যথাযথ নিয়োগ-কাঠামো তৈরি করা হয়নি। সরকারি সেবায় কাগজ, সময় এবং সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন কমিয়ে ডিজিটাল গভার্নেন্স চালু হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মচ্ছব, বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হয়নি। পরিবার ও সমাজে দুর্নীতি-বিরোধী মূল্যবোধ তৈরি ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষার কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনা হয়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়নি। বেকারদের পুনর্বাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। কৃষকের জন্য মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও লাভজনক জীবিকা নিশ্চিত করা যায়নি। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদার সমন্বয় করা যায়নি।

প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চুক্তি পুনর্বিন্যাস, সমুদ্রসীমা ও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে মৎস্য ও খনিজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত, সুন্দরবনসহ দেশের জীববৈচিত্র্য ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে প্রাকৃতিক সম্পদের অংশ হিসেবে সুরক্ষিত রেখে ক্ষতিকর শিল্পায়ন রোধ করার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে দেড় কোটির বেশি প্রবাসী অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, আমরা সেই অবদানকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি।

আরেকটি প্রশ্ন হলো জুলাই আন্দোলনে একটি অপরাধী বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত পুলিশ বাহিনী। জানা গেছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে ৫ আগস্টের পরে পুলিশের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে কি আদৌ কি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে ? এখন কি থানায় সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে, বিনা ঘুষ ও হয়রানি এবং সময়ক্ষেপণ ছাড়াই সেবা পাচ্ছে ? পুলিশকর্তারা কি দুর্নীতি বন্ধ করেছে ? পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন এই বাহিনীকে জনবান্ধব করার ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে ?

বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সব জায়গায় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা মিলে যে দুর্নীতির দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছিল, সেই চক্র তো ভাঙেইনি, বরং কোথাও কোথাও এই চক্র আরও শক্তিশালী হয়েছে। তাহলে নতুন বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের বুলি আওড়িয়ে লাভ কী ? জনমনে এই প্রশ্নও রয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ পরিবারের লোকদের নাম বাদ দেওয়া ছাড়া আর কী কী দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ ও উন্নত করবে ? যে নতুন বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে শুরু থেকে, সেই নতুনত্ব কোথায়? শুধু চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণকারীর রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পরিচয় বদলেই নতুনত্ব ? আমরা বসে আছি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায়। যে বাংলাদেশে বৈষম্য থাকবে না। চাঁদাবাজি থাকবে না। জুলুমবাজ দৌড়ে পালাবে। টেম্পুস্ট্যান্ড দখলকারীদের পাত্তা থাকবে না। স্বৈরাচারের দোসররা স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাবে সীমানার ওপাড়ে। আধিপত্যবাদীরা আর আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকার সাহস করবে না।