নানা অজুহাতে গেছে ১৩ বছর। এতোটা সময়েও শেষ হয়নি সাত শতাধিক মিশুক প্রতিস্থাপনের কাজ। ফলে, এর সাথে জড়িতরা একদিকে পড়ে আছেন বেকায়দায়, অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে রাজস্ব আদায় থেকে। ঢাকা মহানগর মিশুক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিক্সা মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ জানান, বিগত সময়ে ঢাকা মহানগরীতে মিশুক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন মিশুক মালিক সমিতি এর বর্তমান নাম ঢাকামেট্রোপলিটন সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতি( রেজি নং-২৯২৯) এবং ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন এর বর্তমান নাম ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিক্সা মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং-২৯৭৮) মিলে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গঠন করে মালিক শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ এর দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনার পর মিশুকের পরিবর্তে গ্যাস/ পেট্রোল চালিত ফোরস্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেন। সেজন্য ২০১২ সালের ২৭ আগষ্ট তৎকালীন সরকার ২ হাজার ৬৯৬ টি গাড়ি প্রতিস্থাপনের গেজেট প্রকাশ করেন। এরপর দুই কার্যদিবসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ মিকের কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা দেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হলে উক্ত সময়ের মধ্যে ২২৪০ টি মিশুকের কাগজ জমা দেয়া হয়।
অবশিষ্ট ৪৫৬টি মিশুকের মালিকগণ সময় স্বল্পতার কারণসহ বিবিধ সমস্যার কারনে কাগজ যথাসময়ে জমা দিতে পারেন নি। তৎসময়ে উক্ত কাগজ জমার সময়সল্পতা নিয়ে বিতর্ক হলে পরিবর্তীতে যে কোন সময় উক্ত কাগজ জমা নেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে উক্ত প্রতিস্থাপনের কার্যক্রমে মালিক সমিতির ১ (এক) জন ও শ্রমিক ইউনিয়ন এর ১ (এক) জন প্রতিনিধিসহ বিআরটিএ হতে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তার সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠন করে মিশুকের মালিকানা যাচাই বাছাই পূর্বক প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
সেই কমিটিতে সদস্য হিসাবে সাখাওয়াত হোসেন দুলাল শ্রমিক প্রতিনিধি হিসাবে, মোঃ সরোয়ার হোসেন, মালিক প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে উক্ত বাছাই কমিটি পুনর্গঠন করে পুনরায় প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালনো হয়। এ সময় ২ হাজার মিশুক প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ করা হয় । এখনও সাত শতাধিক মিশুকের প্রতিস্থাপন বাকী রয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর মিশুক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিক্সা মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন দুলাল এবং সদস্য সচিব ওবায়দুল হক জানান, ২০১২ সাল হতে চলতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই ১৩ বছর ধরে একজন মিশুক মালিক তার গাড়ী বন্ধ থাকায় আয় থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এছাড়া মিশুক রাখার জন্য প্রতি মাসে অনেক টাকা মাসিক ভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। প্রতি বছর উক্ত গাড়ীর রোড পারমিট, টেস্ট টোকেন, ফিটনেস ইত্যাদি ফি বাবদ রাজস্ব এবং তা পরিশোধ না করায় জরিমানাসহ প্রতিটি মিশুক বাবদ মালিক প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বকেয়া দেনা রয়েছেন।
এ সকল সমস্যার কারনে মিশুক মালিকরা বর্তমানে পথের ভিখারীতে পরিনত হয়েছে বলে দাবী করে তারা জানান, ২০১২ সাল আর ২০২৫ সাল এক নয়, ঢাকা মহানগরিতে তৎকালীন জন সংখ্যার জায়গায় বর্তমানে দুই কোটি লোকের বসবাস এবং তৎকালীন ঢাকা মহানগরির আয়তন বেড়ে বর্তমান আয়তন ২৭০ বর্গ কিঃ মিঃ হয়েছে। মিশুক মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ আর বর্তমান লোক সংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় গাড়ীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বিধায় অবশিষ্ট সাত শতাধিক মিশুকের পরিবর্তে সিএনজি অটোরিক্সা প্রতিস্থাপন করা সময়ের প্রয়োজন। এ প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হলে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা সরকারের এককালীন রাজস্ব আদায় হবে। আগের মতো একটি বাছাই কমিটি গঠন করে অবশিষ্ট মিশুকের পরিবর্তে সিএনজি অটোরিক্সা প্রতিস্থাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানিয়েছে সংগঠনটি।