এক মাসের মধ্যে অন্তত আটবার ফ্লাইটে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ার ঘটনায় তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এ সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বিমান কর্তৃপক্ষ যাত্রীসুরক্ষা ও সেবার মান বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিটি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করছে।
সম্প্রতি বিমানের বেশ কিছু ফ্লাইট কারিগরি জটিলতায় পড়ে। সবচেয়ে বেশিবার জটিলতায় পড়ে বিমান বহরে থাকা বোয়িং উড়োজাহাজগুলো। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিমানের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে ঢাকা-আবুধাবি ফ্লাইটে টয়লেটের ফ্লাশ সম্পর্কিত ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গেল ১ জুলাই হতে ১৩ অগাস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কারিগরি সমস্যাগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি প্রতিটি ফ্লাইটভিত্তিক ঘটনার রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড এবং অপারেশনাল প্রসেস পর্যালোচনা করে ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণ এবং কারিগরি সমস্যাগুলোর বিপরীতে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা বা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তার দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করবে। একই সঙ্গে এ ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ দেবে কমিটি। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তার প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিমানের জনবল ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুইজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় একজন প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে এবং চট্টগ্রামে অন্য একজন প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার কথা বলেছে বিমান। কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে বিমান বিভিন্ন আউটস্টেশনে (যেমন জেদ্দা, দুবাই, মদিনা, দাম্মাম, আবুধাবি ও শারজাহ) অতিরিক্ত চাকা মজুদ রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে আপৎকালীন প্রয়োজনে দ্রুত চাকা প্রতিস্থাপন করা যায়। সেজন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় চাকা সংগ্রহের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে।
জেদ্দায় বিমানের চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে ফ্লাইট অপারেশনস পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীদের সরাসরি তত্ত্বাবধান জোরদার করার কথাও বিমান বলেছে। গত ১৮ অগাস্ট থেকে রাত্রিকালীন বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ শিফট চালু হয়েছে, যা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে বিমানের ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা চলছে। এ প্রক্রিয়ায় বোয়িংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কম্পোনেন্ট সার্ভিসেস প্রোগ্রাম (সিএসপি) তালিকা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, রেকোমেন্ডেড স্পেয়ার পার্টস লিস্ট (আরএসপিএল) অনুসারে যন্ত্রাংশের মজুদ নতুনভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রকৃত ব্যবহারিক তথ্যের ভিত্তিতে যন্ত্রাংশ সংগ্রহের জন্য টেইলরড পার্ট প্যাকেজ (টিপিপি) ব্যবস্থা পর্যালোচনায় রয়েছে বলেও বিমানের ভাষ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি বিমানের প্রকৌশলীদের রি-কারেন্ট প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন শিক্ষানবিশ মেকানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জনবল বাড়ানো এবং নিজস্ব দক্ষতা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান।