গতকাল সোমবার ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। গতকাল সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ, ঘট স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। মন্ত্রোচ্চারণ, ধূপ ও আরতির মধ্য দিয়ে চলছে দেবীর বন্দনা। ষষ্ঠী থেকে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সপ্তমী থেকেই মূল পূজা আরম্ভ হয় বলে জানালেন রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে আসা ভক্ত, দর্শনার্থীরা।

ভক্তরা জানন, সপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে স্নান করানো হয়েছে। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে এই স্নান করানো হয়।

রমনা কালীমন্দিরে দুপুর ১২টার দিকে পুষ্পাঞ্জলি দিতে এসেছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা মালা সাহা। তিনি বলেন, নবপত্রিকায় ৯ রকম গাছের পাতা কলাগাছের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। এরপর বেলপাতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে বউয়ের মতো সাজানো হয় কলাগাছকে। সিঁদুর দিয়ে তাকে স্থাপন করা হয় দেবীর পাশে। এই নবপত্রিকাই কলাবউ হিসেবে পরিচিত। মোহাম্মদপুর থেকে রমনা কালীমন্দিরে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কালসী মিত্রা। তিনি বলেন, সপ্তমীর আরাধনায় কয়েক জনমের পাপ মোচন হয়। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রার্থনা করছেন তিনি।

রমনা কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী জানান, সপ্তমীর পূজা শেষ হয়েছে সকালে। সপ্তমীতে দেবী বিল্বপত্র থেকে মন্দিরে প্রবেশ করেছেন। তিনি বলেন দুষ্টের দমন, সৃষ্টের পালন এই বাসনা নিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভশক্তির জয়ের আকুতি জানিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমীতে দুর্গতিনাশিনী দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

রমনা কালীমন্দিরের চত্বরে দাঁড়িয়ে কথা বললেন পূজা কমিটির আহ্বায়ক তপন কুমার বসু। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে পঞ্চমীর মধ্য দিয়ে। ষষ্ঠীতে মা আসনে বসেছেন। সপ্তমীতে ঘট স্থাপন করা হয়েছে। আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। মানুষ নির্বিঘেœ মন্দিরে যাচ্ছে, দেবীদর্শন করছে।

দুর্গোৎসবকে ঘিরে রমনা কালীমন্দির প্রাঙ্গণে শাখা-সিঁদুর, পূজার বিভিন্ন উপাচারসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। উপস্থিত হয়েছেন খাবারের বিক্রেতারাও। তবে দুপুরে দেখা গেল, এসব দোকানের চেয়ে মূল মন্দিরের সামনেই ভক্তদের ভিড় বেশি।

দেবী এবার এসেছেন গজ বা হাতিতে চড়ে। হিন্দু শাস্ত্রমতে, এর অর্থ মর্ত্যলোক ভরে উঠবে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। দুর্গা যাবেন দোলায় চড়ে। পঞ্চমীতে বোধন এবং ষষ্ঠী তিথিতে আমন্ত্রণ অধিবাস ও ষষ্ঠী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ‘মহাসপ্তমী’, ‘মহাঅষ্টমী’ ও ‘মহানবমী’ পূজা শেষে ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ‘মহাদশমী’ পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আজ মঙ্গলবার মহাঅষ্টমী।

এদিকে ম-পে ২৪ ঘণ্টা ভলান্টিয়ার রাখার নির্দেশ দিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সার্বক্ষণিকভাবে এই ভলান্টিয়াররা যেন সক্রিয় থাকে। এছাড়া রাতের বেলা যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী পূজাম-প পরিদর্শন শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, চলমান দুর্গাপূজা নিরাপদ ও নির্বিঘেœ উদযাপনের লক্ষ্যে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বছর দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে র‌্যাবের পক্ষ থেকে যাবতীয় আয়োজন করা হয়েছে। র‌্যাবের টহল বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন রয়েছে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনী তৎপর। এছাড়া বিভিন্ন ম-পে র‌্যাবের টহল দল নিয়মিত ভিজিট করছে।

র‌্যাব ডিজি শহিদুর রহমান বলেন, রোববার থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিটি ঘটনায় আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সুতরাং আর কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক। পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সার্বক্ষণিকভাবে পূজাম-পে ভলান্টিয়ার রাখবেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ভলান্টিয়াররা যেন সক্রিয় থাকে, এছাড়া রাতের বেলা যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।