ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে নিতে ঈদের পরদিন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন রাজধানীবাসী। রাজধানীর বিনোদকেন্দ্রগুলোয় ভিড় আরও বেড়েছে। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিরাজ করেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের লম্বা ছুটির গতকাল বুধবার ৫ম দিনেও উৎসব-আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেরিয়েছেন অনেকেই। ঘুরেছেন পরিবার-পরিজন ও শিশুদের নিয়ে। রাজধানীর লালবাগ কেল্লা, চিড়িয়াখানা, শিশুমেলা, রমনা পার্ক ও জিয়া উদ্যানজুড়ে ছিল নগরবাসীর কোলাহল। গরম কিছুটা বাড়লেও বেড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করছেন না নগরবাসী।
গতকাল বুধবার ঈদুল আজহার ৫ম দিন দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে রাজধানীর লালবাগ কেল্লা, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক, আহসান মঞ্জিল, মিরপুরের চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিশু পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে দেখা গেছে এমন চিত্র। ঈদ ছুটির প্রতিটি এসব স্থানে দর্শনার্থীদের জোয়ার চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা: রাজধানীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। সন্তানদের বাঘ, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, ময়ূর, বানর, সাপ, নানারকম পাখি ও জলহস্তীসহ বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বাবা -মা। শিশুরা এসব পশু-পাখি দেখে উচ্ছ্বসিত। দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে বাঘ-সিংহের গর্জন পুরো চিড়িয়াখানায় ভিন্ন রকম আবহ এনে দেয়।
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে ঘুরতে এসেছেন ফরহাদ ও মেঘলা দম্পতি। তারা বলেন, সাধারণত সন্তানদের নিয়ে বের হওয়ার তেমন কোনও সুযোগ হয় না। তাই এবার ঈদের ছুটিতে এখানে এলাম। সন্তানদের সাথে নিজরাও উপভোগ করছি। চিড়িয়াখানা সূত্র, জানায় ঈদের পর দিন অর্ধলক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে।
লালবাগ কেল্লায় আনন্দ-আড্ডা: কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন মুঘল আমলের স্থাপনায় ঘুরতে এসেছেন নানা বয়সী মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করা অনেকের কাছে যেন সোনার হরিণ। ভেতরে ঢুকে কেউ কেল্লার ছায়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ কেউ কেউ গ্রুপ ছবি বা সেলফি তুলছেন, মাঠজুড়ে শিশুদের ছুটাছুটিকে ভিডিও করছেন। বিকালে সাড়ে ৫টায় প্রবেশ সময়ের নির্ধারিত সময় পরে এসে টিকিট না পেয়ে অনেকেই মন খারাপ করে ফিরে গেছেন।
বাড্ডা লিংক রোড থেকে তিন বছর বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহ খান নিহানকে নিয়ে এসেছেন বাহার উদ্দিন খান ও শান্তা দম্পতি। তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট পর আসায় প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। শেষতক মসজিদের সামনের লোহার প্রাচীরের বাইরে থেকে কিছুটা উপভোগ করে ফিরতে হচ্ছে।
আহসান মঞ্জিল: রাজধানীর পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নবাবদের তৈরি দেড়শ বছরেরও বেশি পুরোনো আহসান মঞ্জিল। যার আঙ্গিনায় নানা প্রজাতির ফুলের সমারোহ আর ভেতরের আর্কাইভে রয়েছে ফানুস, জগদান, ফলপাত্র, আতরদান, যুদ্ধাস্ত্র, শিরস্ত্রাণ, দাঁতসহ হাতির মাথার কঙ্কাল, বিলিয়ার্ড টেবিল, বক্স, ভল্টসহ দৈত্যাকার আলমারি ও সিন্দুক। বিভিন্ন উৎসবে সেখানেও ছুটে যান দর্শনার্থীরা। সাইনবোর্ড এলাকা থেকে শিশু সন্তান সোহানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন মীর সোহেল ও ফারজানা দম্পতি।
ধানমন্ডি লেকে নৌকা ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা: যেকোনও উৎসব ও সরকারি ছুটিতে ধানমন্ডি লেক দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র। সেখানে নিবিড় বৃক্ষ ও জলাধারের সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে। ঈদের ৫ম দিনে সেখানে নৌকা ভ্রমণ উৎসবে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে বলে জানান আগত কয়েকজন। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এই স্থানটিতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।
শেষ বিকালে রমনা পার্কে মানুষের ঢল: ৬৮ দশমিক ৫ একর আয়তন ও ৮ দশমিক ৭৬ একর জায়গার রমনা পার্ককে বলা হয় রাজধানীবাসীর ফুসফুস। সাধারণত সকাল-বিকাল ও বিভিন্ন ছুটিতে এমনিতেই মানুষের পদচারণা মুখর থাকে পার্কটি। গতকাল বুধবার ঈদের পরের দিন বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সেখানের ছোট বোটে চড়ে লেকে ভেসে বেড়িয়েছেন অনেকে। শেষ বিকালে সেখানে মানুষের ঢল নামে। এছাড়া রাজধানীর পাড়া মহল্লার ছোট ছোট বিনোদন পার্কগুলোতেও প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন নগরবাসী।