ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন আবেদন করার শেষ দিনে নিবন্ধন প্রত্যাশীদের আবেদন জমা দেওয়ার ‘হিড়িক’ পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। গতকাল দুপর পর্যন্ত প্রায় ২৪টি দল আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। দিন শেষে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশন থেকে সরেজমিনে এই তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসি ভবনের সামনে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় জমে আছে। কেউ আসছেন গাড়িবহর, কেউবা দলবেঁধে, আবার কেউবা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসছেন নিবন্ধন পেতে। আবেদন জমা দেওয়ার পর অনেক দলের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে তারা নিজেদের নিবন্ধন পেতে নানা যুক্তি যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি পছন্দের প্রতীকের কথা বলছেন। আবার অনেকে আবার চুপচাপ করে এসে নিবন্ধন আবেদন জমা দিয়েছেন।
দুপুর পর্যন্ত যেসব দলের আবেদন জমা পড়েছে
জনতার পার্টি বাংলাদেশ (জেপিপি); গণদল; বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা); বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি); বাংলাদেশ সমতা পার্টি; বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন; বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি; ইসলামী ঐক্যজোট; নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি); বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি; বাংলাদেশ গণ বিপ্লবী পার্টি; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ); বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ফেডারেশন; জনতার দল; বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি; বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল); বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি); জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি; বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিডিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
হাতি প্রতীকে নিবন্ধন চেয়ে জনতা পার্টি বাংলাদেশ নিবন্ধন আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর দলটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন সংস্কার কমিশন এ বিধিমালার কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। এ প্রস্তাবগুলো কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাব।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি বিধিমালা সংস্কার করা হয় সেই সংস্কারেও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে চাই এবং আমরা হাতি প্রতীক চেয়েছি।
চাবি প্রতীকে নিবন্ধন চেয়ে জনতার দল নির্বাচন ভবনের প্রাপ্তি ও জারি শাখায় আবেদন জমা দিয়েছেন দলের আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল ও সদস্যসচিব আজম খান। আবেদন জমা দেওয়ার পর শামীম কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য পরবর্তী প্রজন্ম। সামনে নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। গত ৫৪ বছরে দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা তৈরি হয়নি। যেসব রাজনৈতিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দরকার তা গড়ে ওঠেনি।
জানা যায়, বিকেল ৩টায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন জমা দেয়।
গত ১০ মার্চ নতুন নিবন্ধন আবেদন জমা নেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি। সেসময় ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া থাকলেও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই মাস বাড়িয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিল সংস্থাটি।
নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য।
নতুন দলের ক্ষেত্রে ইসির নিবন্ধনের শর্ত হল, দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। কার্যকর কমিটি থাকতে হবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়। সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা কিংবা মেট্রোপলিটন থানার কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের নথিও দেখাতে হবে।
দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই শুরু করবে। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসি থেকে নিবন্ধন পেয়েছে ৬টি দল। যা নিয়ে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। এর আগে গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিতে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল।