এক যুগ আগে নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শিগগির শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তদন্তে অনেক অগ্রগতি জানিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখনো তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান এবং আমাদের অনেক ডেভেলপমেন্টও আছে। আমরা শিগগির এটা দিয়ে দেব বলে আশা করছি। নরসিংদীর চরাঞ্চল থেকে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটজনকে গ্রেফতারের তথ্য দিতে তিনি এ সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় ছয়জনের গ্রেফতার ন্যায়বিচারের জন্য আশা জাগিয়েছিল নিহতের পরিবারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে আরও সময় চেয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আবেদন করে র‌্যাব। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক রঞ্জন মজুমদারকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় মামলাটির অগ্রগতি জানতে চাইলে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অবশ্যই তদন্ত শেষে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে আমাদেরও যোগাযোগ হচ্ছে। তদন্ত দীর্ঘদিনের একটা... এখন হুট করে চাইলেই...তদন্তটা তদন্তের মতো যেন সুন্দরভাবে শেষ হয় এবং এটার যেন একটা ভালো রেজাল্ট আসে আমরা সেটাই সবাই কামনা করি। শিগগির ইনশাআল্লাহ...। নারায়ণঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিল্পী রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ এই কিশোর শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়। পরদিন তার এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী সারা বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। তবে দীর্ঘ ১২ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। ত্বকীর পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছিলেন, প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

নদীপথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসছে আগ্নেয়াস্ত্র : সাংবাদিক সম্মেলনে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক(সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের দাবি, আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তারা, আর এগুলো আনা হয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নদীপথে। এর বাইরে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকেও অস্ত্র সংগ্রহ করতো তারা। নরসিংদীর রায়পুরা থানার সায়েদাবাদ এলাকায় শুক্রবার রাতভর ‘সাঁড়াশি অভিযান’ চালিয়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন-মো. শফিক মিয়া (৩২), মো. মোস্তফা (৩৮), আয়নাল (৩৮), মহিউদ্দিন হৃদয় (২২), বাচ্চু মিয়া (৬২), কালু মিয়া (৬৯), মো. বাছেদ (৪০) ও ১৭ বছর বয়সি এক কিশোর। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি বিদেশী পিস্তল, ৫টি একনলা বন্দুক, ১টি দুইনলা বন্দুক, ২টি এলজি, ১টি পাইপগান, ৩টি ম্যাগাজিন ও ৩৫ রাউন্ড গুলী। এই অস্ত্রগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পার হয়ে নদী পথে নিয়ে আসা হতো।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী পাহাড়ি এলাকায় কিছু কারিগর রয়েছে, সেখান থেকেও অস্ত্রগুলো কালেক্ট করতো। কখনো কখনো সেখান থেকে কারিগর নিয়ে এসে বানাতো বলেও আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। র‌্যাব জানায়, নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়শই বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– গত ২৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর চরাঞ্চলে সংঘর্ষে গুলীতে একজন নিহত হয়, ৯ সেপ্টেম্বর রায়পুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং একজন আহত হওয়া, ২০ জুলাই রায়পুরায় চরাঞ্চলে সংঘর্ষে গুলীবিদ্ধ হয়ে একজন নারী নিহত হয় এবং ২২ এপ্রিল নরসিংদীর সদর উপজেলার চরাঞ্চল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তদের গুলীতে একজন নিহতের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের পেছনে আধিপত্য বিস্তার, বালুমহল, চর, ঘাট, বাজার দখলকে ঘিরে এলাকাভিত্তিক গ্রুপগুলো রয়েছে।

র‌্যাব জানায়-১১ অধিনায়ক। তিনি বলেন, অভিযানের সময় তারা আমাদের উপরেও হামলা করার চেষ্টা করেছে, ককটেল বিস্ফোরণসহ শটগানের গুলী। তবে সেইফলি আমরা অভিযানটা শেষ করতে পেরেছি। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যে অপরাধ করে, সে কোন দলের আমাদের দেখার বিষয় না। অস্ত্র যদি দুস্কৃতিকারীর কাছে থাকে বিভিন্ন অরাজকতা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতেই পারে। এজন্য আমরা যেটা করছি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছি, অভিযান চলমান রয়েছে। অস্ত্রগুলো কার মাধ্যমে তাদের হাতে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ব্যবহার করে থাকে, তাদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে এলাকাভিত্তিক। তারা বলেছে আবার বর্ডারকেন্দ্রীক কিছু গ্রুপ থাকে, আমরা তথ্য কালেকশন করছি। তিনি বলেন, নৌপথটা একটু আনসিকিউরড থাকে। অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতে তারা নৌ পথটাকে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু অভিযান চলমান আছে, চলমানের কারণেই কিন্তু অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে।