জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে। তিনি বলেন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই এই নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। আমরা চাই ক্ষমতার পালাবদল যেন দুর্নীতির পালাবদল না হয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে গণতন্ত্র সুরক্ষায় আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, জাকির হোসেন লিটন ও মো. হুমায়ূন কবীর। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভবিষ্যৎ সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করলে তাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার মতো হতে পারে। এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে। আশা করি ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হবে কি না তা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অর্ন্তর্বর্তী সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেবে ঐকমত্য কমিশন।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। এ বিষয়টি ঘটবে যদি নির্বাচনের পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে। নির্বাচিত সরকারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরবর্তী নির্বাচন সুষ্ঠু করার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করতে হবে। গণমাধ্যমকে স্বাধীন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করতে হবে। কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, কতগুলো আইনী, কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে ও সুরক্ষিত থাকবে। তা না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐকমত্য হয়েছে তার ফলে একটা গণভোট হবে। জনগণ সিদ্ধান্ত দিলে তা–ই চূড়ান্ত। গণভোটটা যেন পাস হয়, তার উপর সুন্দর ভবিষ্যত নির্ভর করছে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংস্কার অনেক এগিয়ে যাবে। যেসব বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে সেসব বিষয় জুলাই সনদে থাকবে। জনগণের মতামত নিয়েই সবকিছু বাস্তবায়িত হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে বলে বিশ্বাস করি। নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠনের আগেই কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশ্বাস করতে চাই তারা নিরপেক্ষভাবে কমিশন গঠন করেছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণতন্ত্রকামী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। আগামী ১৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর রেষারেষির কারণে জুলাই সনদ স্বাক্ষরে যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তিনি বলেন, বিগত শাসন আমলে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, গুম-খুন হত্যাসহ জুলাই বিপ্লবে শহীদের হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের আইন শৃঙ্খলার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হবে। তাই হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।