কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর পিজি হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন। চিকিৎসার নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইতোমধ্যে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসীর, তথ্যনির্ভর বক্তব্য, ভিন্ন ধারায় চুলচেড়া বিশ্লেষণ, সুললিত কন্ঠ, প্রমিত উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি, ভাষার লালিত্য, যুক্তির সহজ প্রয়োগ, প্রাঞ্জল ও সাবলীল উপস্থাপনা, পান্ডিত্বপূর্ণ লেখনী, সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও অবদানের জন্য যিনি স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ইসলামের উপর আঘাত আসলে জীবন বাজি রেখে যিনি সিংহের মত বজ্র কন্ঠে গর্জে উঠতেন।

IMG-20250813-WA0233

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ সুবহে সাদিকের সময় পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা ইউসুফ সাঈদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুপরিচিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ছিলেন। আল্লামা সাঈদী রহ. নিজ পিতার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি ১৯৬৪ সালে মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন শেষে গবেষণা কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন মতাদর্শ ও ভাষার ওপর বিশ্লেণধর্মী গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

১৯৬০ সালে আল্লামা সাঈদী রহ. পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার বাদুরা গ্রামের মরহুম ইউনুস আহমেদ এর তৃতীয় কন্যা বেগম সালেহার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে আল্লামা সাঈদী ৪ সন্তানের জনক ছিলেন। যথাক্রমে তারা হলেন- বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মরহুম মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী, ইসলামী চিন্তক ও লেখক শামীম বিন সাঈদী, জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক মাসুদ বিন সাঈদী ও গবেষক ও সমাজসেবক নাসিম বিন সাঈদী।

১৯৬৭ থেকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ. দেশ-বিদেশে দাঈ ইলাল্লাহর ভূমিকায় নিরলসভাবে কাজ শুরু করেন এবং এ কাজের ময়দানে ইসলামের শত্রুরা তাকে এ পর্যন্ত ৪ বার হত্যা করার লক্ষ্যে তার প্রতি গুলী ছুড়ে। ২০১০ সালের আগে ১৯৭৫ সালেও তাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল।

কিন্তু গ্রেফতার, জেল জুলুম নির্যাতন কোনকিছুই আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কুরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার তার মহান মিশন থেকে তাকে বিরত রাখতে পারেনি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে তাকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে আল্লামা সাঈদী নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে এই দুনিয়ার সফর শেষ করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত দাঈ ইলাল্লাহর দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দীর্ঘ ৫০ বছর পৃথিবীর ৫২টি দেশ ভ্রমন করে মানুষকে কুরআনের দাওয়াত দিয়েছেন। তার সারা জীবনের স্বপ্নই ছিলো বাংলাদেশে কুরআনের রাজ কায়েম করা। এ দেশের আকাশে কলেমার পতাকা উড়ছে- এই দৃশ্য দেখে আল্লামা সাঈদী দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই জালিম আওয়ামী লীগ সরকার আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মিথ্যা মামলায় প্রহসনের রায়ের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ১৩টি বছর কারাগারে আটকে রেখে তাকে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। বিনা চিকিৎসায় তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

আল্লামা সাঈদী দীর্ঘদিন যাবৎ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার হার্টে ৫টি রিং পড়ানো ছিল। তিনি ছিলেন ৫০ বছরের ডায়াবেটিসের রুগী। এছাড়া আর্থ্রাটিস, ফ্রোজেন শোল্ডারসহ আরো কিছু জটিল রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন।

১৩ আগস্ট ২০২৩, রোববার, সকালে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেন। তাৎক্ষণিক তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা কারাগারের ফার্মাসিস্ট দিয়ে তার ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা চেক করে চলে যায়। ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকায় আসরের নামাযের পর কারা কর্তৃপক্ষ আল্লামা সাঈদীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ইসিজিসহ কিছু পরীক্ষা শেষে তাকে ঢাকার শাহবাগস্থ বিএসএমএমইউ-তে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) পাঠানো হয়। মাগরিবের নামাযের পর রওয়ানা করিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সিসিইউ সাপোর্টহীন একটি এম্বুলেন্সে আল্লামা সাঈদীকে বিএসএমএমইউ-তে নিয়ে আসে রাত ১১টার দিকে। এরপর আল্লামা সাঈদীকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আল্লামা সাঈদীর একটি ইসিজি শেষে করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইিউ) নিয়ে যায়।

পরদিন ১৪ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, চিকিৎসকের বক্তব্য অনুযায়ী সন্ধা ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে আল্লামা সাঈদীর সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লামা সাঈদী দুনিয়ার সফর শেষ করে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন।

IMG-20250813-WA0269

দায়ী ইলাল্লাহ: ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি “দায়িইলাল্লাহ” হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। দেশে বিদেশে ৫০ বছরের ইসলাম প্রচারের ময়দানে ছিলেন আল্লামা সাঈদী। চট্টগ্রাম প্যারেডগ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে দীর্ঘ ২৯ বছর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানসহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে দীর্ঘ ৩৮ বছর তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী সরকারী মাদরাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২দিন করে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিনদিন ব্যাপী প্রায় দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিলঅনুষ্ঠিত হয়।

IMG-20250813-WA0247

রাজনৈতিক জীবন: আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ. ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ১৯৯৮ সালে জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারনী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আল্লামা সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জামায়াতের নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

IMG-20250813-WA0267

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে: ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজ্জব্রত পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় থাকা তার রুটিন হয়ে গিয়েছিল।

১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রনে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উজ্জাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন। ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে কুয়েত ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ অ্যামেরিকা তাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৯৩ সালে নিউইয়ার্কে জাতিসঙ্ঘের সামনে অ্যামেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে “গ্র্যান্ডমার্শাল“ পদক দেয়া হয়। দুবাই সরকারের আমন্ত্রনে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কুরআনের তাফসির পেশ করেন ।

লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্ভধনি অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম “শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির” সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন । মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে ছয় শতাধিক অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শে দিক্ষিত হন।

কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ. যে বক্তব্য রেখেছেন- তার সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, অডিও-ভিডিও সমগ্র পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। তার পান্ডিত্য সুলভ আলোচনা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন। আমেরিকার এটর্নী অব ল, যোশেফ গ্রোয়ে এর মধ্যে অন্যতম।

IMG-20250813-WA0265

সংসদ সদস্য হিসেবে আল্লামা সাঈদী : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পরপর দু'বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেয়া হয়। তিনি মাত্র ৬,৯৯৬ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।

২০০১ সালে তিনি ১,১০,১০৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রী সুধাংশু শেখর হালদার ৭৬,৭৩১ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর মাত্র তিন জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আল্লামা সাঈদী ৫৫,৭১৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রী সুধাংশু শেখর হালদার পেয়েছিলেন ৫৫,৪৩৭ ভোট।

২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে আল্লামা সাঈদী রহ. সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পিরোজপুর-১ সংসদীয় এলাকার ইন্দুরকানীকে তিনি জিয়ানগর নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি উপজেলায় পরিণত করেছিলেন। আল্লামা সাঈদী জিয়ানগর উপজেলার সকল ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, ব্রীজ-কালভার্ট, হাসপাতাল সবকিছুই নির্মাণ করেন। পিরোজপুর-১ আসনের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য আল্লামা সাঈদীকে পিরোজপুরের উন্নয়নের রূপকার বলা হয়ে থাকে।

আল্লামা সাঈদীকে হত্যা চেষ্টা: অন্তত: চার বার হত্যা করার লক্ষ্যে কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীর প্রতি সরাসরি গুলী ছুড়া হয়েছিল এবং আক্রমন করা হয়েছিল। (এক) প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৩ সালের ১৪ জানুয়ারী। উত্তরবঙ্গের চাঁপাই নবাবগঞ্জের একটি কলেজ মাঠে আয়োজিত তাফসীর মাহফিলে অংশগ্রহনের জন্য কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী চাঁপাই নবাবগঞ্জ গমন করেন। মাহফিল শেষে তাকে যে বাড়িতে রাখা হয়েছিলো, সেই বাড়িটি গভীর রাতে ঘিরে ফেলে নাক মুখ বাঁধা সশস্ত্র আততায়ীরা। আল্লামা সাঈদীর সাথে তখন উপস্থিত ছিলেন পাবনা ইশ্বরদীর নন্দিত আলেম মাওলানা খোদা বখ্স খান (মরহুম)। ঘাতকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাওলানা খোদা বখ্স খান আল্লামা সাঈদীকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী এক বাড়িতে অবস্থান নেন। আল্লামা সাঈদী যে রুমে ছিলেন ঘাতকরা এসে সেই রুমেই ৫/৬ রাউন্ড গুলী ছুড়ে মুহূর্তেও মধ্যেই স্থান ত্যাগ করে। হয়তো ঘাতকেরা ভেবেছিলো তারা তাদের ষড়যন্ত্রে সফল হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার গোলাম, কুরআনের একনিষ্ঠ খাদেম আল্লামা সাঈদীকে ঘাতকদের হাত থেকে সেদিন আপন কুদরতে রক্ষা করেছিলেন।

(দুই) হত্যা প্রচেষ্টার দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৪ সালের ২৯ নভেম্বর। পাবনা শহরের অদূরে পুষ্পপাড়া আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত তাফসীর মাহফিলের প্রধান মেহমান ছিলেন আল্লামা সাঈদী। মাহফিল শেষে মাদারাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আইয়ুব আনসা শেষ হলে আল্লামা সাঈদীর বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ঐ মাদরাসারই প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল্লাহ। খাবার শেষ হতে না হতেই হঠাৎ ঘাতকেরা গুলী চালায়। ঘাতকের ছুঁড়ে দেয়া একঝাঁক বুলেট মুহূর্তেই ঝাঝড়া কওে দেয় আল্লামা সাঈদীর পাশেই দন্ডায়মান মাওলানা নুরুল্লাহর শরীর। ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন মাওলানা নুরুল্লাহ। এভাবে সে যাত্রায়ও আল্লাহ তায়ালা একান্ত দয়া পরবশে আল্লামা সাঈদীকে ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।

(তিন)তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালের ২১ অক্টোবর। হত্যাপ্রচেষ্টার ঘটনাটি ছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। স্থানীয় বামপন্থী আর সমাজতন্ত্রীরা সন্ধার কিছু আগে স্থানীয় সাতকানিয়া স্কুল মাঠে আয়োজিত তাফসীর মাহফিলে অংশগ্রহনের পথে আল্লামা সাঈদীর গাড়ি আটকিয়ে দেয়। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে হত্যার হুমকি ও শ্লোগাননসহ আল্লামা সাঈদীকে বহনকারী গাড়ির দিকে আগাতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা ভিন্ন। গন্ডগোলের মধ্যেই কেউ একজন স্থানীয় থানায় ফোন করে। সাতকানিয়া থানায় তখন চট্টগ্রামের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (নাম উলেখ করা হলোনা, তিনি এখন বর্তমান সরকারের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা) সাতকানিয়া থানা পরিদর্শনে ছিলেন এবং যিনি কিনা আল্লামা সাঈদীকে তার প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। কুরআনের ভাষ্যকার আল্লামা সাঈদী সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন খবরটি পেয়েই তিনি নিজে সদলবলে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তিনি এসেই আল্লামা সাঈদীকে বহনকারী গাড়িটিকে নিজ হেফাজতে নিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর পুলিশি তৎপড়তা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সন্ত্রাসীরা যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। অস্ত্রসহ পুলিশ সেদিন ৫জনকে গ্রেফতারও করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে থানা পুলিশ সন্ত্রাসীদেরকে আর আটকে রাখতে পারেনি, ‘উপরের নির্দেশে’ তাদেরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো পুলিশ। আল্লাহ তায়ালা সেদিনও আল্লামা সাঈদীকে বাতিল শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তারই একান্ত দয়ায়।

(চার) হত্যা প্রচেষ্টার চতুর্থ ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ছিল রাজধানী ঢাকার পান্থপথে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিল। মাহফিলে প্রধান মেহমান ছিলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মাহফিলের সভাপতিত্ব করছিলেন শিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আ.জ.ম ওবায়দুল্লাহ। পান্থপথের রাস্তার এ মাথা থেকে সে মাথা সন্ধার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। ইসলামের এই গণজোয়ার দেখে বাতিল শক্তি সহ্য করতে পারলোনা। তারা আল্লামা সাঈদীকে হত্যার পরিকল্পনায় মেতে উঠলো। মাহফিলের মঞ্চের পাশেই ছিল ‘আনোয়ারা হাসপাতাল’। এই হাসপাতালের ছাদেই অবস্থান করছিলো সন্ত্রাসীরা। মাগরিবের নামাজের পর লক্ষ লক্ষ জনতাকে নিয়ে কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী যেইমাত্র তার আলোচনা শুরু করেছেন, ঠিক তখনি ঘাতকেরা আল্লামা সাঈদীকে উদ্দেশ্য করে পরপর ৮/১০ রাউন্ড গুলী ছোড়ে। আল্লামা সাঈদী শাহাদাতের তামান্না নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মঞ্চে উপবিষ্ট শিবির সভাপতি আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহসহ সকলেই আল্লামা সাঈদীকে বসিয়ে দেওয়ার জন্য হাত ধরে টানতে থাকে, ব্যাকুল কন্ঠে অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তুআল্লামা সাঈদী দৃঢ় কন্ঠে সেদিন বলেছিলেন, “মৃত্যুকে সাঈদী ভয় পায় না। আমি আমার জীবন মহান আল্লাহর রাস্তায় ওয়াক্ফ করে দিয়েছি। লাখো জনতার মধ্যে যদি আমি বসে যাই, তবে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?”

উপস্থিত লাখো জনতা জীবনের মায়া ত্যাগ করে তাৎক্ষনিক আনোয়ারা হাসপাতাল ঘেরাও করে অস্ত্রসহ ৩জন গুপ্তঘাতককে ধরে ফেলেছিলো। বাকিরা পালিয়ে গিয়েছিলো। জনতা ঘাতকদেরকে পুলিশের হাতে সোপর্দও করেছিলো- কিন্তু তৎকালীন সরকার সন্ত্রাসীদের বিচার তো দূরের কথা, থানায় মামলাও গ্রহন করেনি।

IMG-20250813-WA0220

কারাগারের জীবন : ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই আল্লামা সাঈদী প্রথমবার কারাবরণ করেন। খুলনার হেলাতলা মসজিদের সামনে আয়োজিত একটি তাফসীর মাহফিল শেষে ঘরে ফেরার পথে সাদা পোশাকের পুলিশ আল্লামাকে গ্রেফতার করে খুলনা থানায় নিয়ে যায়। খুলনা থেকে রেলপথে তাকে ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে সেখানে ৩/৪ দিন রাখার পর কুরআনের বিপ্লবী দাঈ আল্লামা সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিটেনশনে [রাজনৈতিক কারনে বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্দীত্ব] নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ ভাগে আল্লামা সাঈদী কারাগার থেকে মুক্তি পান।

দ্বিতীয়বার ২০১০ সালের ২৯ জুন ঢাকাস্থ শহীদবাগের নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর আগে ২১ মার্চ ভারতের তল্পিবাহক ও আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা’র কথিত অভিযোগে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোঃ মুজাহিদসহ আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আল্লামা সাঈদীসহ বাকিদেরকেও গ্রেফতার দেখানো হয়। ঐ মামলায় আল্লামা সাঈদীকে সাজা দিতে না পেরে পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে (২০১১ সালে) যুদ্ধাপরাধ মামলা দায়ের ও বিচার শুরু কওে আওয়ামী জালিম সরকার।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেয়। দেশব্যাপি ফাঁসির রায় পরবর্তী ব্যাপক বিক্ষোভে ২৪৫ জনের জীবন দানের পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আল্লামা সাঈদীর কথিত সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ এবং আল্লামা সাঈদী উভয়ই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রিভিউ আবেদন করলে ২০১৭ এর ১৫ মে আপিল বিভাগ উভয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখেন।

১৯৭১ সালে দ্বীনের দাঈ আল্লামা সাঈদীর অবস্থান: ১৯৬৭ সালে দ্বীনের দাঈ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যশোরে বসবাস করা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সময়ে তিনি যশোরের নিউমার্কেট এলাকার ‘এ’ ব্লকে স্বপরিবারে বসবাস করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে তার বাসার পাশেই ক্যান্টনমেন্ট থাকায় এবং সেখান থেকে তার বাসার আশপাশে পাক সেনাদের শেল/বোমা পড়তে থাকায় স্থানীয় কিছু পরিবারের মতো তিনিও স্বপরিবারে ‘বাঘারপাড়া’ চলে যান। বাঘারপাড়া ও মহিরনে স্থানীয় কিছু সাঈদী প্রায় চার মাস স্বপরিবারে অবস্থান করেন।

যুদ্ধের ভয়াবহতা কিছতা কমে এলে আল্লামা সাঈদী যশোর থেকে নিজ গ্রাম পিরোজপুরের সাঈদখালীতে জুলাই’৭১ সালের মাঝামাঝি ফিরে যান।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নিজ এলাকা পিরোজপুর থেকেই পবিত্র কুরআনের তাফসীর মাহফিল শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ছাড়াও পৃথিবীর ৫২টি দেশে আল্লামা সাঈদী কুরআনের তাফসীর মাহফিল করছেন। তার মাহফিলে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মরহুম প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদসহ অসংখ্য মন্ত্রী, এমপি, দেশের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ যোগ দিয়ে কুরআনের তাফসীর শুনেছেন।

এছাড়া কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীর বহু সংখ্যক মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরাও বক্তব্য রেখেছেন। বিদেশের স্কলারগণও মাহফিলে বক্তব্য রেখেছেন। এমনকি পবিত্র কা’বা শরীফের সম্মানিত ইমাম চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাউন্ডের তার তাফসীর মাহফিলে দুই বার তাশরীফ এনেছেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতার মাত্র দু’মাস পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর শহরে সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী একের পর এক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। এদেশের মানুষের মুখে মুখে শ্রদ্ধা জড়িত কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে একটি নাম, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।’

১৯৭৯ সালে নারায়নগঞ্জ চিলড্রেন পার্কে আয়োজিত ৫দিন ব্যাপী তাফসীর মাহফিলের উদ্বোধনী দিবসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুরআনের খাদেম আল্লামা সাঈদীর পাশে বসে ঘন্টাকাল তার তাফসীর শুনেছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী আজও তার সাক্ষী।

মহান মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলীল ও সাব-সেক্টও কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ ছিলেন আল্লামা সাঈদী সাহেবের অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারা উভয়ে উভয়ের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

৮০’র দশকে ঢাকা হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গনে আয়োজিত মাহফিলে তিনি প্রায় প্রতি বছর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন। এসব মাহফিলে সভাপতিত্ব করতেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। দেশের প্রধান বিচারপতিসহ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিবৃন্দ মুগ্ধ চিত্তে ঘন্টার পর ঘন্টা আল্লামা সাঈদীর বক্তব্য শুনেছেন এবং এসবের ভিডিও চিত্রও রয়েছে।

স্বাধীনতার পরে ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক কিংবা রেডিও, টিভি, পত্র-পত্রিকা অথবা মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা পরিবার কেউ কখনো আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেনি। বরং তার এলাকার সকল ধর্মের মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে এমনকি ট্রাইবুনালে এসেও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে- আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাজাকার, আল বদর, আল শামস ছিলেন না এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি সামান্যতম ভূমিকাও পালন করেননি। শুধু তাই-ই নয়- বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ১৮ খন্ডে সমাপ্ত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ গ্রন্থে পিরোজপুর জেলার ছোট-বড় প্রায় সকল স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদরের নাম থাকলেও কোথাও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম নেই।

লেখক আল্লামা সাঈদী : কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ দীর্ঘ ৫০টি বছর পৃথিবীর ৫২টি দেশ ভ্রমন করে মানুষকে কুরআনের তাফসীর শুনানোর পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের তাফসীর ‘তাফসীরে সাঈদী’ নামে ৫ খন্ড তাফসীর রচনা করেছেন। মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা) এর জীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ ৫৮৪ পৃষ্টায় রচনা করেছেন।

এছাড়া ফিকহুল হাদিস, কুরআন এবং বিজ্ঞান, ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামসহ নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৭৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা ও লন্ডন থেকে তার ৪টি বই ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

আল্লামা সাঈদী রহ. এর গবেষণাধর্মী ৭৭টি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহাকাশ ও বিজ্ঞান, কুরআনুল কারীম (সহজবোধ্য বঙ্গানুবাদ), আল কুরআনের দৃষ্টিতে ইবাদাতের সঠিক অর্থ, আল কুরআনের মানদন্ডে সফলতা ও ব্যর্থতা, কুরআন দিয়ে কুরআন বুঝুন, আল্লাহ মৃতদেহ নিয়ে কী করবেন?, ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা, কাদিয়ানীরা কেনো মুসলিম নয়, খোলা চিঠি, চরিত্র গঠনে নামাযের অবদান, জান্নাত লাভের সহজ আমল, তাফসীরে সাঈদী (আমপারা), তাফসীরে সাঈদী (সূরা বাকারাহ) ইত্যাদি।

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীএর মাহফিলের কথা শুনলেই সকল ধর্মের অগণিত মানুষ কুরআনের তাফসীর মাহফিলে জমায়েত হতেন। দেশ-বিদেশের ইসলামের শত্রুরা তাকে হিংসার দৃষ্টিতে দেখলেও মজলুম মুসলিম উম্মাহর কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও অতুলনীয় এক ইসলামী ব্যক্তিত্ব।

আল্লামা সাঈদী আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়েছে তার বই, হাজার হাজার ওয়াজ মাহফিলের অডিও, ভিডিও। আল্লামা সাঈদীর বৈজ্ঞানিক, যুক্তিভিত্তিক, তথ্য নির্ভর, যুগোপযোগী এবং আকর্ষণীয় তাফসীরে মুগ্ধ হয়ে তার মাহফিলে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসতো নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, জাতি-ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার অগণিত মানুষ। যার আবহ এখনও বর্তমান।

ফ্যাসিষ্ট সরকার ১৩ বছর অন্ধকার কারাগারে বন্দী রেখে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের হৃদয় থেকে আল্লামা সাঈদীকে এক চুল পরিমানও তারা মুছে দিতে পারেনি, আর পারবেও না কোনদিন।